পরবর্তী মুঘল সম্রাটবর্গ ( 1707-1857 খ্রিষ্টাব্দ )

💠 পরবর্তী মুঘল সম্রাটবর্গ ( 1707-1857 খ্রিষ্টাব্দ )

🔹প্রথম বাহাদুর শাহ ( প্রথম শাহ আলম , 1707-12 খ্রিষ্টাব্দ ) :
জাজাউ – এর যুদ্ধে জিতে সম্রাট হন । গুরু গােবিন্দ সিং তাঁর আমলে মুঘল দরবারে যােগ দেন , কিন্তু গুরুর মৃত্যুর পর শিখরা বিদ্রোহ করে । শিখদের নেতা বান্দা বাহাদুর 1711 সালে লােহ‌্গড়ের যুদ্ধে পরাজিত হন । বাহাদুর শাহ শাহুকে বন্দীদশা থেকে মুক্তি দেন , ফলে মারাঠা গৃহযুদ্ধ শুরু হয় । বুন্দেলা ও জাঠদের সঙ্গে বাহাদুর শাহ সমঝােতা করেছিলেন ।

🔹জাহান্দর শাহ ( 1712-13 খ্রিষ্টাব্দ ) : জুলফিকার খানের সাহায্যে সম্রাট হন ।
🔹 ফারুকশিয়ার ( 1713-19 খ্রিষ্টাব্দ ) :
দুই অভিজাত আবদুল্লা খান ও হুসেন আলি খান ( সৈয়দ ভ্রাতৃত্বয় ) এই সময় মুঘল দরবারে সবচেয়ে ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠেন । তারা জাহান্দার শাহকে পরাজিত করে ফারুকশিয়ারের সম্রাট হওয়ায় মুখ্য ভূমিকা নেন । পরে ফারুকশিয়ার সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয়ের হাতে নিহত হন এবং বাহাদুর শাহের দুই নাবালক পৌত্রকে একাদিক্রমে তারা সম্রাট বানান । কিন্তু অল্পদিনেই যক্ষ্মা আক্রান্ত এই দুই সম্রাট ( রফি – উদ – দারাজাত , রফি – উদ দৌলা ) মারা যান ।

🔹মহম্মদ শাহ ( 1719-48 খ্রিষ্টাব্দ ) : রােশন আখতার সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয়ের সাহায্যে মসনদে বসে মহম্মদ শাহ নাম নেন । তবে দেশ শাসনের বিষয়ে তিনি সম্পূর্ণ নির্লিপ্ত ছিলেন এবং আমােদপ্রমােদের প্রতি তার আগ্রহের কারণে ‘ রঙ্গিলা ‘ নামেই দিল্লিবাসীর কাছে পরিচিত ছিলেন । 1720 সালে দরবারের অন্য অভিজাতরা সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয়কে হত্যা করে । কিন্তু মুঘল দরবারে গােষ্ঠীদ্বন্দ্ব উত্তরােত্তর বৃদ্ধি পায় । অন্যতম যােগ্য অভিজাত চিন – কিলিচ খান নিজাম – উল – মুলক বিরক্ত হয়ে 1720 সালে দিল্লি ছেড়ে হায়দ্রাবাদে চলে যান । মুঘল দরবারের তুরানী ওমরাহ কামারউদ্দিন চিন কিলিচ খাঁকে ‘ নিজাম উল – মুলক ‘ উপাধি দিয়েছিলেন ফারুকশিয়ার এবং 1727 খ্রিষ্টাব্দে মহম্মদ শাহ তাকে দাক্ষিণাত্যের শাসনকর্তা রূপে স্বীকৃতি দেন ও ‘ আসফ … ’ উপাধিতে ভূষিত করেন । বাংলায় মুর্শিদকুলি ও অবধে সাদাত খান ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকেন । 1739 সালে পারস্য সম্রাট নাদির শাহ ভারত আক্রমণ করেন ও দিল্লি লুণ্ঠন করে ময়ূর সিংহাসন ও কোহিনুর নিয়ে যান । এই আক্রমণের ফলে মুঘল সাম্রাজ্য থেকে সিন্ধু নদের পশ্চিমের সব অঞ্চল বেরিয়ে যায় এবং কেন্দ্রীয় কর্তৃত্ব একেবারেই দুর্বল হয়ে পড়ে ।

🔹আহমদ শাহ ( 1748-54 খ্রিষ্টাব্দ ) : 1748 সালে আহমদ শাহ আবদালি ভারত আক্রমণ করেন , পাঞ্জাব ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় । প্রধানমন্ত্রী ( ওয়াজির ) ইমাদ – উল – মূলক আহমদ শাহকে অন্ধ করে দেন ।

🔹দ্বিতীয় আলমগির ( 1754-59 খ্রিষ্টাব্দ ) : দ্বিতীয় আলমগিরও ইমাদ – উল – মুলকের হাতে নিহত হন ।

🔹দ্বিতীয় শাহ আলম ( 1759-1806 খ্রিষ্টাব্দ ) : প্রধানমন্ত্রী ইমাদ – উল – মুলকের ভয়ে বহুদিন দিল্লিতে ঢুকতেই পারেননি । মীরকাশিম , অবধের সুজা – উদ – দৌলার সঙ্গে শাহ আলমও বক্সারের যুদ্ধে লড়েন এবং ব্রিটিশদের হাতে পরাজিত হন ( 1764 খ্রিষ্টাব্দ ) । 1765 সালে এলাহাবাদের চুক্তির মাধ্যমে বাংলা , বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে তুলে দেন । 1803 সালে ব্রিটিশ জেনারেল লর্ড লেক দিল্লি দখল করেন এবং শাহ আলম ব্রিটিশ পেনশনভােগীতে পরিণত হন ।

🔹দ্বিতীয় আকবর ( 1806-1837 খ্রিষ্টাব্দ ) : আজীবন ব্রিটিশ পেনশনভােগী দ্বিতীয় আকবর রামমােহন রায়কে ‘ রাজা ‘ উপাধি দিয়েছিলেন এবং লন্ডনে গিয়ে তাঁর পেনশন বাড়ানাের চেষ্টা করতে বলেছিলেন ।

🔹দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ ‘ জাফর ’ ( 1837-1857 খ্রিষ্টাব্দ ) : শেষ মুঘল সম্রাট , বিখ্যাত কবি ( ‘ জাফর ’ ছদ্মনাম ) , যাঁর দরবারে অন্যান্য বিখ্যাত কবিদের মধ্যে মীর্জা গালিবও ছিলেন । নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সিপাহি বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিতে বাধ্য হয়েছিলেন । কিন্তু তাঁর পত্নী জিনাতমহল ব্রিটিশদের তথ্য সরবরাহ করে সহায়তা করতেন । বিদ্রোহ দমনের পর তার প্রায় সব জীবিত পুত্র ও পৌত্রদের হত্যা করা হয় এবং বাহাদুর শাহকে রেঙ্গুনে গৃহবন্দী করে রাখা হয় ( 1858 খ্রিষ্টাব্দ ) । রেঙ্গুনেই 1862 সালে বাহাদুর শাহ মারা যান ।