প্রশ্ন : তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অর্থ লিখুন । তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির পরিধি সম্পর্কে লিখুন ।
উত্তর : তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অর্থ : তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তিতে দুটি শব্দ আছে—তথ্য এবং যে প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয় । তাই তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তির অর্থ বুঝতে হলে তথ্য আহরণ এবং সংরক্ষণে প্রযুক্তি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় যে প্রযুক্তির ব্যবহার হয় । সেই বিষয়টি তুলে ধরা প্রয়োজন ।
যোগাযোগ ব্যবস্থায় যে প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয় তাকে যোগাযোগ প্রযুক্তি বলে , যেমন— বেতার , দূরদর্শন , দূরভাষ ইত্যাদি যা বহুদিন ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে । কম্পিউটারের আবিষ্কারের পর যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি হয়েছে । যার উদাহরণ হল উপগ্রহ , অপটিক্যাল ফাইবার , মাইক্রো কম্পিউটার , ভিডিয়ো রেকর্ডিং ও ভিডিয়ো ডিস্ক ইত্যাদি । এই ধরনের প্রযুক্তির মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে সমগ্র বিশ্বের যে – কোনো প্রান্তের জনগণের নিকট নিমেষে তথ্য পৌঁছে দেওয়া যায় ।
উপরে আলোচিত বক্তব্যকে ভিত্তি করে বলা যায় যে , যখন বিভিন্ন প্রকারের তথ্য সংগ্রহ সংরক্ষণ এবং তার যোগাযোগের উপায়গুলিতে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় , তাকে বলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির পরিধি : তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির পরিধি ব্যক্তিজীবন সমাজজীবন , জাতীয় জীবন এবং আন্তর্জাতিক স্তরে এত দ্রুত গতিতে বিস্তৃত হচ্ছে যা এই সংক্ষিপ্ত আলোচনার মধ্যে বেঁধে রাখা সম্ভব নয় । আমাদের আলোচনা যেহেতু শিক্ষা প্রসঙ্গে সীমাবন্ধ তাই শিক্ষাব্যবস্থায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির পরিধি নিম্নে আলোচিত হল । শিক্ষাব্যবস্থার যেসব ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয় তা হল—
(1) শ্রেণিকক্ষ শিক্ষণ ।
(2) শিক্ষা ব্যবস্থাপনা ।
(3) শিক্ষার্থীদের পারদর্শিতা পরিমাপন ।
(4) দূরশিক্ষা ।
(5) স্বয়ং শিখন ।
(1) শ্রেণিকক্ষ শিক্ষণ : শ্রেণিকক্ষ শিক্ষণে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নিম্ন ক্ষেত্রগুলিতে হৃত হয় , যেমন—
(ক) শ্রেণিকক্ষে উভয়মুখী যোগাযোগ অর্থাৎ শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়েই পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া করার সুযোগ পায় ।
(খ) উত্তম শিখনের জন্য কার্যকরী ফিব্যাক পাওয়া যায় । এই ফিড্ব্যাকের মাধ্যমে শিক্ষক বুঝতে পারেন শিক্ষার্থীরা তাঁর বক্তব্য সঠিকভাবে বুঝতে পেরেছে কিনা । অন্যথা হলে শিক্ষক পুনরায় সচেষ্ট হবেন এবং প্রয়োজনমতো নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করবেন ।
(গ) শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রেষণা সঞ্চার হয় । উপযুক্ত মনোযোগ ব্যতীত শিক্ষার্থী শিক্ষকের বক্তব্য অনুধাবন করতে পারে না । এমতাবস্থায় শিক্ষার্থী আরও মনোযোগ দেয় অর্থাৎ তার মধ্যে প্রেষণা সঞ্চারিত হয় ।
(ঘ) ক্ষোপকরণ হিসাবে তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় ।
(2) শিক্ষা ব্যবস্থাপনা: শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় ।
(ক) অর্থ , ফিস , অনুদান ইত্যাদি সম্পর্কিত তথ্য সংরক্ষণ করা হয় ।
(খ) বিভিন্ন কার্যাবলির ফলাফল সংরক্ষণ করা ।
(গ) প্রয়োজনমতো তথ্যগুলিকে লেখচিত্রে রূপদান ।
(ঘ) কোন কাজ কোন্ সময় এবং কবে করা হবে তা নির্দিষ্ট করে রাখা ।
(ঙ) দৈনন্দিন কার্যাবলি তালিকাবন্ধ করা ।
(চ) জাতীয়স্তরে ডেটা ব্যাংকের প্রয়োজনমতো বিদ্যালয় সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করা ।
(ছ) বিদ্যালয় কর্মচারী সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষণ করা ।
(জ) প্রধান শিক্ষক এবং কর্মচারীদের মধ্যে তথ্যের আদানপ্রদানকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা ।
(ঞ) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভরতির ক্ষেত্রে বর্তমানে তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা হচ্ছে ।
(3) শিক্ষার্থীদের পারদর্শিতা পরিমাপ : বর্তমানে শিক্ষার্থীদের পারদর্শিতা পরিমাপের ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অন্যতম কৌশল অনলাইনের ব্যবহার । পরে পরিমাপের মানগুলিকে কম্পিউটারের সাহায্যে সংরক্ষণ করা যায় যা পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনমতো ব্যবহার করা হয় । শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাগত পারদর্শিতা সম্পর্কে নিজেই বিচার করতে পারে ।
(4) দূরশিক্ষায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রয়োগ : সাম্প্রতিককালে দূরশিক্ষার চাহিদা যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে যার ফলে আশাতীতভাবে দূর শিক্ষার প্রসার ঘটেছে । বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে দূরশিক্ষার সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ভূমিকার উপর অর্থাৎ দূরশিক্ষা বর্তমানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল । শিক্ষায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কৌশল , যেমন—টেলিকনফারেন্সিং , ভিডিয়ো ক্যাসেট , ইন্টারনেট প্রভৃতি ব্যবহার করা হয় ।
(5) স্বয়ং শিখন স্বয়ং শিখনের ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । প্রোগ্রামড শিখন , ওয়েবসাইট ইন্টারনেট প্রভৃতির সাহায্যে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই নিজেদের জ্ঞান বৃদ্ধি করছে । অর্থাৎ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির আবিষ্কৃত বিভিন্ন বৈদ্যুতিন মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছে । শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির পরিধি আলোচনায় উপরোক্ত বিষয়গুলি ছাড়া আরও কিছু বিষয় সংযোজন করা যায় । যেমন — ভাষা শিক্ষা (Language Teaching) . ETV , অণুশিক্ষণ (Micro Teaching) , বেতার এবং দূরদর্শনের মাধ্যমে সম্প্রচার ইত্যাদি ক্ষেত্রেও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার প্রসার লাভ করেছে ।