আশাপূর্ণা দেবী ‘কুমকুম’ নামক গল্প সংকলনের অন্তর্গত ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপন নামক কিশোরের জ্ঞানচক্ষু খুলে যাবার কাহিনী বিস্তৃত হয়েছে। গল্পটির নামের মধ্যে রয়েছে দারুণ এক ব্যঞ্জনা। গল্পটি বিশ্লেষণ করলে নামকরণের বিষয়টি অনুধাবন করা যেতে পারে।
ছোটো মাসির বিয়ে উপলক্ষ্যে তপন নামক কিশোর মামার বাড়ি যায়। তার নতুন মেসো একজন লেখক হবার সুবাদে, কোনো লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটে প্রথম। একজন লেখক সম্পর্কে কাল্পনিক ধারণা বাস্তবে রূপ পায় তার। সেখানেই সে একটি গল্প লেখে যা তার নতুন মেসো ছাপাতে দেয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় ছাপার অক্ষরে তপনের নিজের গল্প আর খুঁজে পায় না। সংশোধনের নামে পুরো গল্পটাই তার মেসো বদলে দিয়েছে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই তপনের দু’দুবার জ্ঞানচক্ষু খুলে যাবার প্রসঙ্গ এনেছেন লেখিকা। একজন লেখককে প্রত্যক্ষ করে প্রথমবার তার উপলব্ধি ঘটে। – “আশ্চর্য কোথাও কিছু উলটোপালটা নেই, একেবারে নিছক মানুষ”। অর্থাৎ লেখকরাও যে আর সবার মতো সাধারণ মানুষ এই জ্ঞানের উদয় হয়েছিল তার।
মেসো যখন পত্রিকা ছাপানোর নামে পুরোটাই সংশোধিত রূপে পাল্টে দিয়েছেন, তখন সেই লেখায় তপন অনুপস্থিত। একজন কিশোরের আবেগ, উচ্ছ্বাস প্রত্যাশা সব মুহূর্তে ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। সবচেয়ে আনন্দের দিন তার কাছে হয়ে ওঠে “তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন”।
এভাবেই দু’বার তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে গিয়ে সে জীবনের চরম সিদ্ধান্তে উপনীত হয় – “যদি কখনো লেখা ছাপাতে দেয় তো তপন নিজে গিয়ে দেবে। নিজের কাঁচা লেখা। ছাপা হয় হোক, না হয় না হোক।”
আলোচ্য গল্পটি একজন কিশোরের স্বপ্ন গুলোর নয় বরং স্বপ্ন নির্মাণের গল্প হয়ে উঠেছে। বাস্তব জীবনের রূঢ়তার সঙ্গে কল্পনাপ্রবণ বালকের অভিঘাতে তারই জ্ঞানোদয় ঘটেছে গল্পে। তাই বলা যায় নামকরণটি হয়ে উঠেছে সার্থক।