গুপ্তবংশ

💠 গুপ্তবংশ :


◼️ খ্রিষ্টীয় চুতর্থ শতকে উত্তর ভারতে গুপ্ত সাম্রাজ্যের উত্থান ঘটে । অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সাংস্কৃতিক অগ্রগতির কারণে গুপ্তবংশের শাসনকাল সাধারণভাবে প্রাচীন ভারত ইতিহাসের স্বর্ণযুগ হিসাবে পরিচিত । গুপ্তবংশের প্রথম দুই রাজা শ্রীগুপ্ত ও ঘটোৎকচ গুপ্ত সম্ভবত সামন্ত রাজা ছিলেন ।

◼️ প্ৰথম চন্দ্রগুপ্ত ( 319 / 20-335 খ্রিষ্টাব্দ ) :

🔹প্রথম গুপ্ত শাসক , যিনি ‘ মহারাজাধিরাজ ‘ উপাধি গ্রহণ করেন । 319 সালে তাঁর সিংহাসনে আরূঢ় হওয়ার সময় থেকেই গুপ্তাব্দের সূচনা ধরা হয় ।

🔹মগধ এবং বর্তমান উত্তরপ্রদেশের কিছু অংশ ( অযােধ্যা , এলাহাবাদ ) চন্দ্রগুপ্তের সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল ।

🔹লিচ্ছবি রাজকন্যা কুমারদেবী ছিলেন চন্দ্রগুপ্তের মহিষী এবং গুপ্ত স্বর্ণমুদ্রায় একসঙ্গে তাঁদের চিত্র দেখা যায় । চন্দ্রগুপ্ত স্বয়ং সমুদ্রগুপ্তকে নিজের উত্তরাধিকারী নির্বাচিত করে গিয়েছিলেন ।



◼️ সৃমুদ্রগুপ্ত ( 335-380 খ্রিষ্টাব্দ ) :

🔹সমুদ্রগুপ্ত সমগ্র উত্তর ভারত – কে গুপ্ত সাম্রাজ্যভুক্ত করেন । দাক্ষিণাত্যের বহু রাজাকেও তিনি পরাস্ত করেন , কিন্তু তাদের আনুগত্য স্বীকারের বিনিময়ে তিনি তাদের রাজ্য ফিরিয়ে দেন । সমুদ্রগুপ্তের রাজ্যজয়ের বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায় তাঁর সভাকবি । হরিষেণ রচিত ‘এলাহাবাদ প্রশস্তি’ থেকে । সুমুদ্রগুপ্ত অশ্বমেধ যজ্ঞ করেছিলেন । তাঁর সামরিক বিজয়ের পরিপ্রেক্ষিতে ভিনসেন্ট স্মিথ তাঁকে ভারতের নেপােলিয়ন আখ্যা দিয়েছিলেন ।


🔹সমুদ্রগুপ্ত বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন । সামরিক বা প্রশাসনিক প্রতিভা ছাড়াও তিনি একজন প্রসিদ্ধ কবি , সাহিত্যের পৃষ্ঠপােষক এবং সংগীতজ্ঞ ছিলেন । তাঁর আমলেই প্রথম বহু সংখ্যক স্বর্ণমুদ্রা ছাড়া হয় । এই সব মুদ্রায় সমুদ্রগুপ্তকে কখনও ব্যাঘ্ৰশিকারী , কখনও বা ‘বীণাবাদক কবিরাজ ’ রূপে দেখানাে হয়েছে । কালিদাস সহ গুপ্ত রাজসভার ‘ নবরত্ন ‘ হয়তাে তার সময়েও ছিল ।


◼️ দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্য ( 380-415 খ্রিষ্টাব্দ ) :


🔹সমুদ্রগুপ্ত ও দত্তাদেবীর পুত্র দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত ‘ বিক্রমাদিত্য ‘ উপানি ধারণ করেন । ভারতীয় কিংবদন্তিতে উজ্জয়িনীর যে রাজা বিক্রমাদিত্যের সঙ্গে বহু কাহিনী জড়িত , সাধারণভাবে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তকেই সেই বিক্রমাদিত্য মনে করা হয় ।


🔹 কিংবদন্তি অনুসারে এবং দিল্লির লৌহস্তম্ভে খচিত প্রশস্তি ( যেখানে তাঁকে ‘ রাজা চন্দ্র ‘ বলা হয়েছে ) অনুসারে , দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত শক ও বাই বাহ্নিকদের পরাস্ত করেন । দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত পিতার কাছ থেকে একটি বিরাট সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন । নিজের সামরিক বিজয় ছাড়াও বিবাহবন্ধনের মাধ্যমে সেই সাম্রাজ্যকে তিনি আরও বিস্তৃত করেন ।

🔹নাগবংশের রাজকন্যা কুবেরনাগকে তিনি বিবাহ করেন এবং নিজ কন্যা প্রভাবতী দেবীর সঙ্গে বাকাটকাজ রুদ্রসেনের বিবাহ দেন । পরে রুদ্রসেনের মৃত্যু হলে নাবালক পুত্রের অভিভাবিকারূপে প্রভাবতীই বাকাটক রাজ্য পরিচালনা করেন ।

🔹 কালিদাস – সহ ‘ নবরত্ন ’ – এর অধিকাংশই তাঁর দরবারে উপস্থিত ছিলেন বলে মনে করা হয় । তাঁর রাজত্বকালেই চৈনিক পর্যটক ফা – হিয়েন ভারতে এসেছিলেন ( 399-414 খ্রিষ্টাব্দে ) ।



◼️ প্রথম কুমারগুপ্ত ( 415-455 খ্রিষ্টাব্দ ) :

🔹দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের পরে তাঁর পুত্র কুমারগুপ্ত দীর্ঘদিন রাজত্ব করেন । তাঁর আমলে সাধারণভাবে শান্তি ও সমৃদ্ধি বজায় ছিল ; কিন্তু সামরিক বিজয়ের নমুনা না থাকায় অনেকেই মনে করেন যে , গুপ্ত সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়েছিল । কুমারগুপ্তের আমলেই প্রথম হুন আক্রমণ ঘটে , যা যুবরাজ স্কন্দগুপ্ত প্রতিহত করেন ।


🔹গুপ্তরাজারা সাধারণভাবে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের পৃষ্ঠপােষক ছিলেন । তবে কুমারগুপ্ত ব্যক্তিগত ধর্মমতের দিক থেকে অন্যদের তুলনায় গোঁড়া ছিলেন , যদিও সম্রাট হিসেবে তিনি পরধর্মসহিষ্ণ ছিলেন । কুমারগুপ্তের আমলেই নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ।


◼️ স্কন্দগুপ্ত ( 455-467 খ্রিষ্টাব্দ ) :

শেষ বিখ্যাত গুপ্ত সম্রাট , স্কন্দগুপ্তও বিক্রমাদিত্য উপাধি গ্রহণ করেছিলেন । অধিকাংশ সময়ে যুদ্ধবিগ্রহে ব্যস্ত থাকলেও স্কন্দগুপ্ত সুশাসক ছিলেন এবং গুপ্ত সাম্রাজ্যকে অখণ্ড রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন ।

◼️ স্কন্দগুপ্তের মৃত্যুর পর অভ্যন্তরীণ বিবাদে গুপ্ত সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে । এই সময় ক্রমাগত বিদেশি আক্রমণে কেন্দ্রীভূত সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে । আক্রমণকারীদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ছিল হুনরা । হুনদের প্রথম নরপতি তােরমান ও তাঁর পুত্র মিহিরকুলের নতৃত্বে তারা উত্তর ভারতে ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালায় । গুপ্তবংশের নরসিংহ বালাদিত্য ও মালবের যশােধর্মন হুনদের পরাস্ত করলেও উত্তর ভারতের শহর ও অর্থনীতি এই আক্রমণে চূড়ান্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।