প্রশ্ন : একক পাঠ পরিকল্পনা কাকে বলে ? পাঠ পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা লিখুন । এর সুবিধা লিখুন ।
উত্তর : একক সংক্রান্ত পরিকল্পনায় ( Planning of Topic or Unit ) সমগ্র বিষয়বস্তুকে ( পাঠক্রমকে ) কয়েকটি মূল এককে ভাগ করা হয় । এই ভাগ করা হয় কতকগুলি বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে । পাঠক্রমকে ভাগ বা বিন্যাস করা হয় পাঠ্যবিষয়ের গুণগত বৈশিষ্ট্য , শিক্ষার্থীদের আচরণগত বৈশিষ্ট্য বা শিক্ষামূলক প্রতিক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে । এমনিভাবে কতকগুলি একক বৈশিষ্ট্যের পরিপ্রেক্ষিতে পাঠক্রমের পুনর্বিন্যাস করাকে বলা হয় একক পরিকল্পনা ।
পাঠ পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা : শিক্ষক / শিক্ষিকা দৈনন্দিন পাঠপরিচালনার জন্য যে পরিকল্পনা রচনা করেন তাকেই বলা হয় পাঠ – পরিকল্পনা ( Lesson Plan ) । অন্যভাবে বললে শ্রেণিকক্ষে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই বিভিন্ন কাজের উদ্দেশ্যে পৌঁছোনোর জন্য বিভিন্ন করণীয় বিষয়ের বিভাগই হল পাঠ – পরিকল্পনা ।
পাঠ পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তার কারণগুলি হল —
1. পাঠ পরিকল্পনার দ্বারা শিক্ষক / শিক্ষিকা শিক্ষণের উদ্দেশ্য ও পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত হতে পারেন ।
2. শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে নিয়ন্ত্রণে এনে পাঠ – পরিকল্পনা শিক্ষণ প্রক্রিয়াকে যথেষ্ট । কার্যকরী করে তোলে ।
3. পাঠ পরিকল্পনা পাঠক্রমে প্রতিটি একককে অত্যন্ত সহজভাবে বুঝতে সাহায্য করে ।
4. পাঠ পরিকল্পনা রচিত হয় শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনকে ভিত্তি করে ।
পাঠ পরিকল্পনার সুবিধা : পাঠ পরিকল্পনার নানান সুবিধা আছে । যেমন—
( ক ) মনোবিজ্ঞান – ভিত্তিক শিক্ষাদান : পাঠটীকা তৈরির সময় আগেভাগে শিক্ষককে শিক্ষণকৌশল , পদ্ধতি ও শিক্ষোপকরণ ব্যবহারের চিন্তা করে নিতে হয় । এর পিছনে ছাত্রদের আগ্রহ , রুচি , দক্ষতা , সামর্থ্য ইত্যাদি বিচার করতে হয় । শিক্ষার্থীরা এর ফলে মনোবিজ্ঞান – ভিত্তিক পদ্ধতিতে পাঠ গ্রহণের সুযোগ পায় ।
( খ ) উপকরণ তৈরি : কোনো পাঠ একক উপস্থাপনের জন্য কী কী শিক্ষা উপকরণ প্রয়োজন তা শিক্ষক আগেভাগে তৈরি করে নিতে পারেন , এর ফলে শিক্ষার্থীরা বিশেষভাবে উপকৃত হয় ।
( গ ) যথাযথ বিষয়বস্তু উপস্থাপন : বিষয়বস্তু নির্দিষ্ট থাকায় এবং তা পরিকল্পিত হওয়ায় পাঠদানকালে অপ্রয়োজনীয় বস্তুর আসার সুযোগ থাকে না । অর্থাৎ শিক্ষক / শিক্ষিকা যথাযথ বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন ।
( ঘ ) তত্ত্বের সঙ্গে বাস্তব উপকরণের ব্যবহার : পাঠটীকা পরিকল্পনার সময় তাত্ত্বিক জ্ঞানের প্রয়োগ করা হয় । কিন্তু শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় চার্ট , মানচিত্র , মডেল ইত্যাদি বাস্তবিক জিনিস ব্যবহার করে বিষয়টিকে জীবন্ত করে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করা যায় ।
( ঙ ) পূর্বার্জিত জ্ঞানের ভিত্তি : পূর্বার্জিত জ্ঞানের ভিত্তিতে শিক্ষক নতুন ধারণা দান করেন । ফলে শিক্ষার্থীদের নতুন ধারণা লাভের সুযোগ হয় ।
( চ ) দক্ষতা বিকাশে সহায়তা : শিক্ষক / শিক্ষিকার দক্ষতা বিকাশে পাঠটীকা সহায়তা
,( ছ ) চিন্তায় স্পষ্টতা ও স্বচ্ছতা : পাঠ – পরিকল্পনা তৈরির ফলে শিক্ষকের চিন্তার বিস্তারে আসে স্পষ্টতা ও স্বচ্ছতা ।
( জ ) পাঠদান হয় প্রাণবন্ত : পাঠ পরিকল্পনার ফলে শিক্ষক যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে শ্রেণিতে তাঁর পাঠ দিতে পারেন । এর ফলে শ্রেণি অত্যন্ত প্রাণবন্ত থাকে ।
( ঝ ) শ্রেণিকক্ষে শৃঙ্খলা রক্ষা : পূর্ব প্রস্তুতির জন্য শিক্ষক / শিক্ষিকা শ্রেণিতে পাঠদানকালে শিক্ষার্থী প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে পারেন , ফলে শ্রেণিতে শৃঙ্খলা রক্ষা সহজ হয় ।
( ঞ ) সময় বাঁচে : পুরো ব্যাপারটি শিক্ষকের আগেভাগে তৈরি থাকে বলে নির্দিষ্ট সময়ে পাঠক্রমটি শেষ করা সম্ভব হয় । এর ফলে সময়ের অপচয় হয় না ।
( ট ) মূল্যায়ন সম্ভব : পাঠ্যসূচির মাধ্যমে শ্রেণিতে পাঠদান করলে পাঠদান শেষে শ্রেণিতেই শিক্ষার্থীদের যেমন মূল্যায়ন করা যায় তেমনি সংশোধন পাঠ দেওয়া যায় ।