উত্তর ভারত ( 750-1192 খ্রিষ্টাব্দ )

💠উত্তর ভারত ( 750-1192 খ্রিষ্টাব্দ ) :

◼️ 750-1000 খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে উত্তর ভারতে তিনটি প্রধান শক্তি ছিল প্রতিহার বংশ ( মধ্যপ্রদেশ – রাজস্থান – গুজরাট ) , রাষ্টকূট বংশ ( উত্তর দাক্ষিণাত্য – মহারাষ্ট্র অঞ্চল ) এবং বাংলার পালবংশ । এই তিনটি বংশ তথাকথিত ‘ ত্রিশক্তি দ্বন্দ্ব ’ – এ লিপ্ত ছিল । এই লড়াই ছিল মূলত উত্তর ভারত দখল নিয়ে , যার প্রতীক ছিল কনৌজ দখল । তিনটি শক্তিই বিভিন্ন সময়ে কনৌজ দখল করে কিন্তু ক্রমাগত যুদ্ধবিগ্রহে তিনটি সাম্রাজ্যই দুর্বল হয়ে পড়ে ।

◼️ রাষ্ট্রকূটর্দের স্থান দখল করে চালুক্যরা । বাংলায় ক্ষমতায় আসে সেনবংশ । প্রতিহার সাম্রাজ্য ভেঙে বহু ছােটো রাজ্যের উৎপত্তি হয় — এগুলির অধিকাংশই ছিল রাজপুত শাসিত । এই রাজপুত শাসকদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য ছিল অগ্নিকুলজাত চার রাজপুত পরিবার — দক্ষিণ রাজস্থানের প্রতিহার বা পরিহার , পূর্ব রাজস্থানের চৌহান , গুজরাটের সােলাঙ্কি এবং মালবের পাওয়ার বা পারমার বংশ । রাজপুতদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব লেগেই থাকত এবং বহিরাগত আক্রমণকারীর সম্মুখে ঐক্যবদ্ধ লড়াই তাদের পক্ষে অসম্ভব ছিল । বহিরাগত আক্রমণকারীদের মধ্যে গজনির সুলতান মাহমুদ মূলত লুণ্ঠনের উদ্দেশ্যে আসতেন , কিন্তু মহম্মদ ঘােরীর আক্রমণের উদ্দেশ্যই ছিল সাম্রাজ্য স্থাপন ।

◼️ আফগানিস্তানের গজনী রাজ্যের সুলতান সবুক্তিগীনের পুত্র মামুদ সুলতান হন 998 খ্রিষ্টাব্দে । মামুদের দৃষ্টি ছিল ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ও মন্দিরের অতুল ঐশ্বর্যের দিকে । তিনি সতেরাে বার ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অভিযান করেন । এর মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযােগ্য গুজরাট অভিযান ও সােমনাথ মন্দির লুণ্ঠন । 1025-26 খ্রিষ্টাব্দে এই মন্দির লুঠ করেন মামুদ ।

◼️ শাহনামা রচয়িতা বিখ্যাত কবি ফিরদৌসী , দার্শনিক আল বিরুনি মামুদের সভা অলঙ্কৃত করতেন । আল বিরুনির প্রকৃত নাম ছিল আবু রিহান । 973 খ্রিষ্টাব্দে মধ্য এশিয়ার খিবায় তার জন্ম । মামুদের ভারত অভিযানের সময় বিরুনি তার সাথে এদেশে আসেন । ভারতবর্ষ নিয়ে তার বিখ্যাত গ্রন্থ হল ‘ তহকিক – ই – হিন্দ ’ ।

◼️ মহম্মদ ঘােরী ছিলেন আফগানিস্থানের ঘোর রাজ্যের অধিপতি গিয়াসউদ্দিন ঘােরীর ভাই । কথিত আছে , দিল্লি ও আজমীরের চৌহান বংশীয় রাজপুত রাজা তৃতীয় পৃথ্বীরাজ কনৌজের গহড়বাল বংশীয় রাজপুত রাজা জয়চাঁদ ( বা জয়চন্দ্র ) -এর কন্যা সংযুক্তাকে তার স্বয়ম্বর সভা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করলে অপমানের শােধ নিতে জয়চাঁদ মহম্মদ ঘােরীকে পৃথ্বীরাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্ররােচিত করেন । এই কাহিনী বর্ণিত আছে রাজপুত চারণ কবি চাঁদ বরদই – এর পৃথ্বীরাজ – রাসাে কাব্য গ্রন্থে । 1191 এবং 1192 খ্রিষ্টাব্দে থানেশ্বরের কাছে তরাইনের প্রান্তরে পৃথ্বীরাজ ও ঘােরীর সৈন্যদলের মধ্যে যুদ্ধ হয় । প্রথম যুদ্ধে ঘােরী পরাজিত হয়ে পলায়ন করেন । কিন্তু দ্বিতীয় তরাইনের যুদ্ধে পৃথ্বীরাজ পরাজিত ও নিহত হন । এই তরাইনের যুদ্ধের ফলেই ভারতবর্ষের মাটিতে স্থায়ী মূসলমান রাজ্য স্থাপনের পথ প্রশস্ত হয় ।