প্রশ্ন : আন্তরবিষয়গত দৃষ্টিভঙ্গির ( Interdisiplinary Approach ) ধারণা বিবৃত করুন । শিখনের ক্ষেত্রে আন্তরবিষয়গত দৃষ্টিভঙ্গির ব্যবহারের কারণ লিখুন ।
উত্তর : বর্তমান শিক্ষণ – শিখনের সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা ধরনের গবেষণা করা হয়েছে । এই ধরনের গবেষণাগুলি থেকে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে কোনো নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি নয় বরং যে ধরনের পরিবেশে সকল শিক্ষার্থীরা সহজে শিখনে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে সেটি হল গুরুত্বপূর্ণ । আন্তরবিষয়গত দৃষ্টিভঙ্গি হল এই ধরনের গবেষণার ফলশ্রুতি । সাধারণত বিষয় বা ‘ discipline ‘ শব্দটির শব্দকোষগত অর্থ হল শিক্ষা বা নির্দেশদানের একটি শাখা এবং এই অর্থটি ধরে অগ্রসর হয়ে যে নতুন ধারণাটি আমাদের সামনে আসে তা হল আস্তরবিষয়গত বা ‘ Interdisciplinary ‘ । শব্দটির অর্থ হবে শিক্ষা বা নির্দেশদানের একটি শাখা যা বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ।
আমাদের জ্ঞানের ক্ষেত্রগুলি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গবেষণা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । গবেষণার ফলশ্রুতি হিসাবে জ্ঞানের নতুন ক্ষেত্রগুলি সংযুক্ত হয়ে চলেছে । নতুন জ্ঞানের নির্মাণ , তার শ্রেণিবিভাজন সম্ভব হয় বিশেষজ্ঞ চিন্তাভাবনার ফলস্বরূপ । প্রতিটি বিষয়ের কিছু নিজস্ব চিন্তাধারা , অর্থ , পেশাগত ধারণা , কৌশল ও পেশাগত স্তরবিন্যাস বর্তমান । প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা যদি পরস্পরের সঙ্গে সংযোগ বজায় রেখে কাজ করেন তাহলে বিষয়গত সমস্যাগুলির অনেকটাই সমাধান হয় এবং পঠনপাঠনের ক্ষেত্রেও তা সাহায্যকারী হয় ।
প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে আমরা অনেক ক্ষেত্রে আস্তরবিষয়গত দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি আরও কতকগুলি দৃষ্টিভঙ্গিকে দেখতে পাই সেইগুলি সম্পর্কে নীচে কিছুটা আলোচনা করা হল—
1. Intradisciplinary : একটি নির্দিষ্ট বিষয়গত ক্ষেত্রে কাজ করা ।
2. Crossdisciplinary : একটি বিষয়কে অন্য একটি বিষয়ের দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা দর্শন ।
3. Multidisciplinary : এক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ের ব্যক্তিরা একত্রে কাজ করেন এবং প্রত্যেকে নিজস্ব বিষয়গত জ্ঞানকে তুলে ধরেন ।
4 Interdisciplinary : এক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ের জ্ঞান ও পদ্ধতির সমন্বয়সাধন করা হয় এবং প্রকৃত সংশ্লেষণধর্মী দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবহার করা হয় ।
5. Transdisciplinary : বিষয়গত দৃষ্টিভঙ্গির ঊর্ধ্বে উঠে একটি ঐক্যবদ্ধ বৌদ্ধিক রূপরেখা প্রস্তুতির উপর এক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয় ।
নীচের একটি চিত্রের সাহায্যে বিষয়টি সহজে উপলব্ধি করা সম্ভব—
আন্তরবিষয়গত দৃষ্টিভঙ্গি ( Interdisciplinary Approach ) – এর ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত সংজ্ঞাগুলি থেকে আমরা কিছু ধারণা লাভ করতে পারি—
• বিভিন্ন ক্ষেত্রের জ্ঞানকে একত্রে সমন্বয়সাধন করা হয় ।
• এটি বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিকে তুলে ধরে ও তার সংমিশ্রণ ঘটায় । একটি নির্দিষ্ট ধারণা , সমস্যা , প্রশ্ন বা প্রেক্ষাপটকে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার করা হয় ।
• বিভিন্ন বিষয়গত নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা সাধারণ সমস্যাকে বিচার করা হয় এবং গবেষকরা একত্রিতভাবে কাজ করেন ।
• এই দৃষ্টিভঙ্গি একটি বিষয় থেকে অপর বিষয়ে পদ্ধতির আদানপ্রদান করে ।
আন্তরবিষয়গত দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবহারের কারণ : শিক্ষার্থীদের জ্ঞান , অন্তদৃষ্টি , সমস্যাসমাধানমূলক ক্ষমতা , আত্মবিশ্বাস , স্বক্ষমতা এবং শিখনের প্রতি স্পৃহা প্রভৃতি । আন্তরবিষয়গত দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা বিকাশ ঘটানো সম্ভব হবে । আন্তরবিষয়গত দৃষ্টিভঙ্গি এই ধারণাগুলির উপলব্ধিতে সহায়তা করে ।
প্রথমত , আন্তরবিষয়গত দৃষ্টিভঙ্গি নির্দেশদানের ক্ষেত্রে কোনো বিষয় পূর্বে কী ছিল আর বর্তমানে কী পরিবর্তন হয়েছে তার উপলব্ধিতে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করে । নির্দেশদানের ক্ষেত্রে আন্তরবিষয়গত দৃষ্টিভঙ্গি তাদের পূর্বধারণাকে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করে । সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের বিষয়গত দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে যা শিক্ষার্থীদের বর্তমান ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে ও বিষয়গত নতুন দিকগুলির উন্মোচনে সহায়তা করে ।
দ্বিতীয়ত , আন্তরবিষয়গত শিক্ষা শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল চিন্তাভাবনার বিকাশে সহায়তা করে । এটি শিক্ষার্থীদের বৌদ্ধিক বিকাশ ঘটায় । এই দৃষ্টিভঙ্গি বিভিন্ন বৌদ্ধিক সক্ষমতা , মস্তিষ্কভিত্তিক ক্ষমতা , মানসিক প্রক্রিয়ার বিকাশ ঘটায় ।
তৃতীয়ত , আন্তরবিষয়গত দৃষ্টিভঙ্গি নির্দেশদানের ক্ষেত্রে ব্যবহার করলে তা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধারণাগত দ্বন্দ বা ধোঁয়াশা থেকে মুক্ত হতে সহায়তা করে ।
চতুর্থত , আস্তরবিষয়গত দৃষ্টিভঙ্গি বিভিন্ন ধারণার নৈতিক দিকগুলির গ্রহণযোগ্যতাকে তুলে ধরে , শিক্ষার্থীদের কোনো ধারণার ভালোমন্দ , সঠিক – বেঠিক , খারাপ – ভালো দিকগুলিকে । উন্মোচিত করে । ফলে শিক্ষার্থীদের বিচার ক্ষমতার উপযুক্ত বিকাশ ঘটে ।
পঞ্চমত , আন্তরবিষয়গত দৃষ্টিভঙ্গি , কার্যকরী শিখনের বিকাশ ঘটায় । যখন শ্রেণিকক্ষের অভিজ্ঞতাগুলি অর্থবহ ও স্থায়ী হয় তখনই কার্যকরী শিখন সংঘটিত হয় ।
ষষ্ঠত , শিক্ষার্থীরা যখন ভিন্নমুখী পথ শেখে তখন আন্তরবিষয়গত দৃষ্টিভঙ্গি সেই সম্পর্কে যথাযথ বোধগম্যতার বিকাশ ঘটায় । গার্ডনারের বহুবুদ্ধি তথ্য থেকে আমরা জানতে পারি যে শিখনের কত্রে শিক্ষার্থীরা ভিন্নধর্মী বৌদ্ধিক ক্ষমতা নিয়ে অন্তর্ভুক্ত হয় । ক আন্তরবিষয়গত দৃষ্টিভঙ্গি বিভিন্ন বিষয় থেকে ধারণাটা গ্রহণ করে এবং এই ক্ষেত্রে নির্দেশদান প্রক্রিয়ায় মুক্ত কথোপকথনের ব্যবস্থা করা হয় ফলে সকল শিক্ষার্থী তার নিজস্ব বিষয়গত দৃষ্টিভঙ্গির পরিপ্রেক্ষিতে অংশগ্রহণ করতে পারে । ফলে এই দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা শ্রেণিকক্ষের সমস্ত শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণকে সুনিশ্চিত করা সম্ভবপর হয় ।
সপ্তমত , NCTE উল্লেখ করেছে শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতাগুলি যতই শিক্ষার্থীর বহুমুখী বাস্তবিক জীবনযাত্রার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ হবে ততই তা কার্যকরী হবে । তাদের বক্তব্য অনুসারে বাস্তবিক পৃথিবীর সমস্যাগুলি অত্যন্ত জটিল এবং এককভাবে কোনো বিষয়ের পক্ষে তার সমাধান করা সম্ভবপর নয় । শিক্ষার্থীরা এর মধ্যে দিয়ে উপলব্ধি করতে পারে আন্তরবিষয়গত দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য ।