প্রশ্ন : অস্থিসংক্রান্ত প্রতিবন্ধী বা বিকলাঙ্গ শিশু কাকে বলে ? বিকলাঙ্গ শিশুকে কীভাবে শনাক্ত করবেন ? এদের শিক্ষার ব্যবস্থা কীভাবে করবেন তা লিখুন ।
উত্তর : সমাজে একশ্রেণির মানুষ আছেন , মানসিক দিক থেকে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক , কিন্তু বিকলাঙ্গতার কারণে তাঁদের ক্ষমতার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে পারেন না । এই বিকলাঙ্গতা বোঝানোর জন্য ইংরেজিতে বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করা হয় । যেমন— ‘ Crippled ‘ , ‘ Locomo tor Handicap ‘ , ‘ Neuromuscular Disorder ‘ ইত্যাদি । যে সমস্ত ব্যক্তির অস্থি , পেশি এবং সন্ধিস্থলে ত্রুটি থাকে , তাঁরাই এই শ্রেণিভুক্ত ।
Crippled বলতে বোঝায় সেই সমস্ত শিশুদের , যাদের পা অথবা অন্য কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ত্রুটি থাকে ।
Locomotor Handicap বলতে তাদেরকেই বোঝানো হয় যাদের নিম্নাঙ্গের অথবা স্নায়বিক বা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে কোনো সমস্যার কারণে চলাফেরায় সমস্যা তৈরি হয় । একটি পা কিংবা উভয় পায়ের অভাবে যাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা তৈরি হয় তারাও এই পর্যায়ভুক্ত ।
Neuromuscular Disorder বলতে সেই সমস্ত শিশুকে বোঝায় , যাদের সুনির্দিষ্ট স্নায়বিক অসুস্থতার কারণে সমস্যা তৈরি হয় ।
এইভাবে বিকলাঙ্গ শিশু বলতে অস্থি , পেশি ও সন্ধিস্থল এবং স্নায়বিক সমস্যায় আক্রান্ত সকল প্রকার শিশুদেরকেই বোঝানো হয় । এ ছাড়া পোলিয়ো আক্রান্ত , পক্ষাঘাতগ্রস্ত , দুর্ঘটনায় অঙ্গহানি , জন্মকালীন অসাবধানতায় অঙ্গহানি ইত্যাদি শিশুরাও এর অন্তর্ভুক্ত ।
বিকলাঙ্গ শিশুদের শনাক্তকরণ : বিকলাঙ্গ শিশুদের শনাক্তকরণের প্রক্রিয়া অপেক্ষাকৃত সহজ । নিম্নে উল্লেখিত বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে এক বা একাধিক বৈশিষ্ট্য থাকলে কোনো শিশুকে বিকলাঙ্গ হিসাবে চিহ্নিত করা যায় ।
(i) দেহের গঠনে ত্রুটি থাকলে ।
(ii) দেহের বিভিন্ন সন্ধিস্থলে নিয়মিত ব্যথা অনুভূত হলে ।
(iii) স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে না পারলে ।
(iv) অঙ্গহানি হলে ।
(v) বসতে ও দাঁড়াতে সমস্যা হলে ।
(vi) বিভিন্ন পেশি ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সুনিয়ন্ত্রত না হলে ।
(vii) নড়াচড়ায় জড়তা থাকলে এবং
(viii) কোনো বস্তু ধরা , তোলা বা রাখার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিলে । এ প্রসঙ্গে একটি কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে , কেবলমাত্র উপরিউক্ত সমস্যাগুলি বা অন্য কোনো সমস্যা থাকলেই কোনো শিশুকে বিকলাঙ্গ শিশু হিসাবে চিহ্নিত করা উচিত হবে না । এজন্য সবসময়ই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা কাম্য ।
বিকলাঙ্গ শিশুদের শিক্ষাব্যবস্থা : বিশেষ শিক্ষার বিশেষজ্ঞগণ বলেন , মৃদু ও মধ্যম মাত্রার বিকলাঙ্গ শিশুরা শিক্ষাক্ষেত্রে সাধারণ শিশুদের মতোই দক্ষতা প্রদর্শন করে থাকে । তাই তাদের জন্য বিশেষ কোনো শিক্ষাব্যবস্থার প্রয়োজন হয় না । কিন্তু গুরুতর বা চূড়ান্ত মাত্রার প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা শিক্ষাক্ষেত্রে গ্রহণ করা প্রয়োজন । এই শিক্ষাব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দিক হল—
(1) 1986 খ্রিস্টাব্দের জাতীয় শিক্ষানীতিতে প্রতিবন্ধী শিশুদের একীভূত শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে । বিশেষত বিকলাঙ্গ শিশুদের শিক্ষাক্ষেত্রে সাধারণ বিদ্যালয়েই ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে । যদিও তা যথেষ্ট ব্যয়সাপেক্ষ ।
(2) শিক্ষাক্ষেত্রে তাদের সহায়তা করার জন্য দ্রুত শনাক্ত করা প্রয়োজন ।
(3) বিকলাঙ্গ শিশুদের শিক্ষাক্ষেত্রে সহায়তা করার জন্য বিদ্যালয়ের গঠনগত বিভিন্ন পরিবর্তনসাধন করা দরকার । যাতে হুইল চেয়ার , ক্লাচ ও কৃত্রিম অঙ্গ ব্যবহারের মাধ্যমেও তারা সহজেই চলাফেরা করতে পারে ।
(4) সদর্থক শিক্ষাদানের জন্য বিভিন্ন সহায়ক উপকরণের ব্যবস্থা করতে হবে ।
(5) বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে স্বাভাবিক শিশুদের পাশাপাশি বিকলাঙ্গ শিশুদের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করতে হবে ।
(6) বিভিন্ন প্রকার বিকলাঙ্গ শিশুদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ।
পরিশেষে বলা যায় , সম্পূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থাকে সার্থক করে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষকদের বিশেষ দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে । তাঁদের উদার মানসিকতা নিয়ে সমস্ত শিক্ষার্থীকে সমদৃষ্টিতে গ্রহণ করবেন এবং বিকলাঙ্গ শিক্ষার্থীরা যাতে মানসিক , প্রাক্ষোভিক কোনো দিকে অসুবিধার সম্মুখীন না হয় , সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখবেন ।