উত্তর :–
অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা : সাধারণভাবে বিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রিত পরিবেশের বাইরে কোনোরকম পূর্বনির্ধারিত রীতিনীতি বা অনুষ্ঠান ছাড়াই শিক্ষার্থীরা যে ধরনের শিক্ষালাভ করে , তাকে অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা বলে । অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা একদিকে যেমন নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা এবং নিয়মবহির্ভূত শিক্ষার থেকে আলাদা , তেমনি এই শিক্ষা আবার নিয়ন্ত্রিত ও নিয়মবহির্ভূত শিক্ষার পরিপূরকও বটে ।
অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার বৈশিষ্ট্য : অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল—
( 1 ) নিয়ন্ত্রণহীন শিক্ষা : অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এই শিক্ষায় কোনোরকম প্রথাগত নিয়ন্ত্রণ থাকে না । শিক্ষার প্রধান চারটি উপাদান , তথা শিক্ষার্থীই কেবল এই শিক্ষায় প্রাধান্য পায় এবং বাকি তিনটি উপাদানের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয় না ।
( 2 ) প্রাসঙ্গিক জ্ঞান অর্জনে সহায়তা : এই ধরনের শিক্ষায় শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয় সম্বন্ধে প্রাসঙ্গিক জ্ঞান লাভ করে । এতে শিক্ষার্থী নিজের ইচ্ছা ও প্রয়োজনমতো জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে ।
( 3 ) শিক্ষকনির্ভর নয় : অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় নির্দিষ্ট কোনো শিক্ষক নিযুক্ত থাকে না । শিক্ষার্থী প্রকৃতি , পরিবার এবং বিভিন্ন সামাজিক সংস্থা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে । বর্তমানে গণশিক্ষার বিভিন্ন মাধ্যম , যেমন— বেতার , চলচ্চিত্র , দূরদর্শন , সংবাদপত্র প্রভৃতি থেকে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই এই শিক্ষা গ্রহণ করে ।
( 4 ) কৃত্রিমতাহীন স্বাভাবিক শিক্ষা : অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা সম্পূর্ণ কৃত্রিমতাহীন শিক্ষা । এখানে জোর করে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো হয় না । শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক উপায়ে বিভিন্ন উৎস বা মাধ্যম থেকে শিক্ষালাভ করে ।
( 5 ) নির্দিষ্ট পাঠক্রমের অনুপস্থিতি : অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষাব্যবস্থায় নির্দিষ্ট কোনো পাঠক্রম অনুসরণ করা হয় না এবং কোনো বিষয়ও ( subject ) নির্দিষ্ট থাকে না ।
( 6 ) চার দেওয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় : এই ধরনের শিক্ষা বিদ্যালয় বা বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না । শিক্ষার্থী যে – কোনো স্থান থেকে যে – কোনো সময়ে এই শিক্ষালাভ করতে পারে । ট্রেনে বা বাসে কোনো যাত্রীর আচরণ থেকে , এমনকি রাস্তার ধারের পোস্টার থেকেও এই শিক্ষালাভ করা যেতে পারে।
( 7 ) পূর্বপরিকল্পিত বা পূর্বনির্ধারিত নয় : এই শিক্ষাব্যবস্থায় কোনো কিছুই পূর্বপরিকল্পিত বা পূর্বনির্ধারিত থাকে না । যেহেতু এখানে বিদ্যালয় থাকে না , পাঠক্রম থাকে না , কোনো নির্দিষ্ট সময় থাকে না , সেহেতু পূর্বপরিকল্পনার কোনো সুযোগ এখানে নেই ।
( 8 ) নির্দিষ্ট পাঠ্যপুস্তক – বর্জিত শিক্ষা : এই ধরনের শিক্ষায় যেহেতু কোনো পাঠক্রম নেই , তাই এতে নির্দিষ্ট কোনো পাঠ্যপুস্তকও থাকে না ।
( 9 ) পর্যবেক্ষণ , অনুশীলন ও অনুকরণ – নির্ভর শিক্ষা : এই শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থী নিজে বাড়ির বা বাইরের পরিবেশের কোনো উপাদানকে পর্যবেক্ষণ করে এবং তা শেখে তাও নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা । অনুশীলনের মাধ্যমে নিজে নিজেই শেখে । ছোটোরা বড়োদের অনুকরণ করে যা
( 10 ) নির্দিষ্ট শিক্ষাস্তর ও বয়সসীমা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয় : অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় নির্দিষ্ট শ্রেণি বা শিক্ষাস্তর থাকে না এবং এই শিক্ষাগ্রহণের জন্য কোনো নির্দিষ্ট বয়সসীমা নেই । অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষাব্যবস্থায় যেহেতু কোনো পাঠক্রম নেই , নিয়মশৃঙ্খলা বা কোনো পরিকল্পনার ব্যবস্থা নেই এবং কোনো বিদ্যালয়ও নেই , তাই এতে মূল্যায়নের কোনো স্বতঃস্ফূর্ত শিক্ষাব্যবস্থা । সুযোগও নেই । শিক্ষার্থী সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে ইচ্ছানুসারে শিক্ষালাভ করে । এটি এক সম্পূর্ণ
অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার সীমাবদ্ধতা : শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা বিশেষ ভূমিকা উল্লেখ করা হল পালন করলেও এই শিক্ষা সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত নয় । এর কয়েকটি সীমাবদ্ধতা বা অসুবিধা নীচে
( 1 ) অসম্পূর্ণ অভিজ্ঞতা দান : কোনো নির্দিষ্ট পাঠক্রম বা পাঠ্যসূচি না থাকায় অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা কোনো বিষয়ে সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতা দিতে পারে না । তা ছাড়া বর্তমান জগৎ ও জীবন ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে । এই জটিল জীবনের উপযোগী শিক্ষার কিছু অংশ অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা থেকে পাওয়া গেলেও , পুরোটা পাওয়া অসম্ভব ।
( 2 ) চাহিদাপূরণে অসামর্থ্য : অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা শিক্ষার্থীর সব চাহিদা পূরণ করতে পারে না । প্রতিনিয়ত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে জ্ঞানের জগৎ ক্রমশপ্রসারিত হচ্ছে । বিভিন্ন জটিল এবং বিজ্ঞানভিত্তিক বিষয়ে পাঠদানের জন্য চাই অভিজ্ঞ শিক্ষক , উপযুক্ত শিক্ষালয় ও পরীক্ষাগার । অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় যেহেতু শিক্ষক , শিক্ষালয় ইত্যাদি থাকে না তাই এটি মানুষের ওইসব চাহিদা পুরণে অসমর্থ ।
( 3 ) সামাজিক পরিবর্তনের অনুপযোগী : এই ধরনের শিক্ষা সামাজিক পরিবর্তনে খুব একটা উপযোগী হয় না । সুনাগরিক হতে গেলে সামাজিক পরিবর্তনের রীতিনীতিগুলির সঙ্গে পরিচিত হওয়া বিশেষ প্রয়োজন । অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষাব্যবস্থায় রাষ্ট্রের কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় সামাজিক বিকাশে এই শিক্ষা বিশেষ সাহায্য করতে পারে না ।
( 4 ) সৃজনমূলক বিকাশের অনুপযোগী : অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় শিক্ষার্থীর সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ ঘটার সুযোগ খুবই কম । এক্ষেত্রে কেবল পর্যবেক্ষণ এবং অন্ধ অনুকরণের দ্বারা শিক্ষা আয়ত্ত হয় ।
( 5 ) প্রকৃত মূল্যায়নের অভাব : অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার দ্বারা শিক্ষার্থীরা যে জ্ঞান অর্জন করে , সেই জ্ঞানের প্রকৃত মূল্যায়নের কোনো ব্যবস্থা এই শিক্ষাপদ্ধতিতে নেই । সঠিক মূল্যায়ন ছাড়া কোনো শিক্ষাব্যবস্থা সফল হয় না । অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার ক্ষেত্রে এটি একটি মারাত্মক ত্রুটি ।
( 6 ) শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সুযোগ ও গুরুত্বের অভাব : অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় যেহেতু কোনো সময়সূচি থাকে না , তাই শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম সুযোগ পায় । বহু পরিবারে বিভিন্ন কাজের জন্য পিতামাতাকে দিনের বেশির ভাগ সময় বাইরে কাটাতে হয় । সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা চাহিদামতো বিষয় শেখার সুযোগ কম পায় । তা ছাড়া নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার বিভিন্ন সংস্থাগুলি আজকাল শিক্ষণীয় বিষয়ের পরিবর্তে অন্যান্য স্থূল বিনোদনের দিকে বেশি ঝুঁকেছে । ফলে সেগুলি শিক্ষার্থীর কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে ।
( 7 ) বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব : অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় কোনো প্রকার নিয়ন্ত্রণ না থাকায় শিক্ষার্থী নিজের ইচ্ছানুযায়ী যা মন চায় তাই শেখে । মূল্যায়ন নেই , পাঠক্রম নেই , শিক্ষকও নেই । তাই সমাজে এই জাতীয় শিক্ষার বিশ্বাসযোগ্যতা নেই বললেই চলে ।