প্রশ্ন : শিক্ষণবিজ্ঞানকে বাস্তবায়িত করার জন্য কীভাবে পাঠের বিষয়বস্তুর কাঠামো প্রস্তুত বা সংগঠন ( Structuring ) করবেন তা লিখুন ।
উত্তর : কাঠামো প্রস্তুতকরণ বা সংগঠনের ধারণাটিই সাধারণভাবে তথ্য প্রদানের সঙ্গে যুক্ত । কীভাবে এই Structuring দ্বারা পারদর্শিতাকে সর্বোচ্চ করা যায় সে সম্পর্কে বলতে গিয়ে Rosensline এবং Stevens (1986) বলেছেন যে , একে তখনই সর্বোচ্চ ফলদায়ক করা যায় যখন কেবলমাত্র শিক্ষকরা সক্রিয়ভাবে পাঠের উপকরণগুলি সরবরাহ করেন না তার সঙ্গে সঙ্গে নিম্নলিখিতভাবে পাঠ – এর কাঠামো প্রস্তুত করেন —
a . তাঁরা সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা প্রয়োজনীয় উদ্দেশ্যাবলির প্রেক্ষিতে পাঠের সূচনার ব্যবস্থা করেন ।
b . বিষয়বস্তুর রূপরেখা প্রস্তুত করেন এবং তার সঙ্গে পাঠটীকার অংশের সংযোগ ও আদানপ্রদান বজায় রাখেন ।
c প্রধান প্রধান ধারণাগুলির প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করা ।
d . সবশেষে মূল ধারণাগুলি পুনরালোচনা করা ।
এক্ষেত্রে সংযুক্ত বিভিন্ন শিক্ষণ দক্ষতা বা নির্দেশদান দক্ষতাগুলি সম্পর্কে জানা দরকার , যেমন—
A. পাঠ উপস্থাপন পটুত্ব ( Skill of Introducing a Lesson )
B. ব্যাখ্যাকরণ পটুত্ব ( Skill of Explaining )
C. দৃষ্টান্ত উল্লেখকরণ ( Illustrating with Examples )
D. উদ্দীপন বৈচিত্র্যসাধন ( Stimulus Variation )
E. শিক্ষা সহায়ক উপকরণ ব্যবহারের দক্ষতা ( Skill of Using Teaching Aids )
F. পাঠ সমাপ্তিকরণ পটুত্ব ( Skill of Closure )
A. পাঠ উপস্থাপন পটুত্ব : শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু করার প্রাথমিক স্তরই হল পাঠ অবতারণা । অর্থাৎ শিক্ষক যে বিষয়টি পড়াবেন সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করতে হয় । এক্ষেত্রে বিশেষ দক্ষতা প্রয়োজন , কারণ শ্রেণির শুরুতে সাধারণত শিক্ষার্থীরা অমনোযোগী থাকে । তাদের সামনে হঠাৎ পাঠদান শুরু করলে প্রাথমিক অবস্থায় তা কার্যকরী নাও হতে পারে । তাই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অন্তরঙ্গতার পরিবেশ তৈরি করে , পাঠ্যবিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত শিক্ষার্থীদের ইতিপূর্বে জ্ঞাত কোনো বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করে অদ্যকার বিষয়বস্তু উত্থাপন করতে হয় । অর্থাৎ শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে প্রাথমিক স্তর হবে From known to unknown এক্ষেত্রে এই ধরনের দক্ষতার সাহায্যকারী কয়েকটি উপকরণ হল
( ক ) মনোযোগ আকর্ষণ : পাঠ্যবিষয়ে প্রবেশের পূর্বে প্রথমে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য শিক্ষককে কিছু প্রসঙ্গ উত্থাপন করতে হয় ।
( খ ) প্রেষণার স্তর অনুধাবন : শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবিষয় গ্রহণের জন্য উপযুক্ত প্রেষণার স্তর সম্পর্কে শিক্ষকের ধারণা গঠন করতে হয় ।
( গ ) পূর্ব অভিজ্ঞতার সঙ্গে সম্পর্কস্থাপন : শিক্ষা সবসময়ই শিক্ষার্থীদের পূর্ব অভিজ্ঞতার সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়া উচিত । তাই নতুন বিষয় উত্থাপনের পূর্বে শিক্ষার্থীদের প্রাসঙ্গিক পূর্ব অভিজ্ঞতার সঙ্গে তাকে সম্পর্কযুক্ত করতে হয় ।
( ঘ ) প্রধান বক্তব্য চিহ্নিতকরণ : ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীদের পাঠে মনোযোগী করে তোলার পর মূল বিষয়ের অবতারণা করতে হয় ।
( ঙ ) পাঠ সহায়ক উপকরণ ব্যবহার : পাঠ আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য উপযুক্ত শিক্ষা উপকরণ ( ছক , চার্ট , ছবি , মানচিত্র ইত্যাদি ) ব্যবহার করতে হয় ।
B. ব্যাখ্যাকরণ পটুত্ব : ব্যাখ্যাকরণ হল পাঠদানের মূল কাজ । সহজ – সরলভাবে বিষয়বস্তু উপস্থাপন করাই হল ব্যাখ্যাকরণ । এক্ষেত্রে প্রত্যেক শিক্ষককেই ছাত্রদের পরিণমনের স্তরের কথা মাথায় রাখতে হবে । ব্যাখ্যাদান যাতে ছাত্রদের উপযোগী হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে । শিক্ষকের নিজের পাণ্ডিত্য জাহির করার প্রবণতাকে সংযত করে যদি শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বাড়ানোর দিকে মনোযোগী হওয়া যায় তবেই ব্যাখ্যাকরণ ফলপ্রসূ হবে । শিক্ষার্থী – শিক্ষক যখন কোনো বিষয়কে সবিস্তারে বোঝান এবং বিষয় সম্পর্কে কী , কেন ও কীভাবে হয়েছে এই ধরনের ব্যাখ্যা দেন বা আলোচনা করেন তখন তাকে ব্যাখ্যাকরণ পটুত্ব বলা হয় । এই ক্ষেত্রে শিক্ষক কোনো বিষয়কে বোঝাবার জন্য কতকগুলি পরস্পর সম্পর্কিত বিবৃতি ব্যবহার করেন । ব্যাখ্যাকরণে কতকগুলি উপাদান ব্যবহৃত হয় । যেমন — স্বচ্ছতা , ধারাবাহিকতা , গুরুত্ব , সূচনা ও সমাপ্তিসূচক বাক্য এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলি উল্লেখকরণ । একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের শিক্ষণে বিভিন্ন ধারণা , ঘটনা , নিয়ম , নীতি , সাধারণীকরণ , পদ্ধতি , কার্যাবলি , কারণ প্রদর্শন ইত্যাদি করা হয়ে থাকে । সেই কারণে একজন শিক্ষককে বিভিন্ন ধরনের শিখন অভিজ্ঞতা একত্রিত করতে হয় এবং এগুলি তিনি হয় ভাষাগতভাবে নয়তো ব্ল্যাকবোর্ডে কিছু লেখা বা চিত্রের মাধ্যমে বোঝান । এখানে তিনি ধারণার সঙ্গে সংযুক্ত কিছু পরস্পর সম্পর্কিত বাক্য ব্যবহার করেন এবং এমন একটি শিখন অভিজ্ঞতার পরিবেশ সৃষ্টি করেন যাতে শিক্ষার্থীরা সহজেই বিষয়টি সম্পর্কে অনুধাবন করতে সক্ষম হয় । ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে এই যে পরস্পর সম্পর্কিত বাক্যগুলি ব্যবহার করা হয় এই প্রক্রিয়াটিকেই বলা হয় ব্যাখ্যাকরণ দক্ষতা বা পটুত্ব । বিষয় ব্যাখ্যাকরণে শিক্ষক যে আচরণগুলি করবেন সেগুলি হল—
1. যথার্থরূপে সূচনা ও সমাপ্তিসূচক শব্দের ব্যবহার ।
2. ব্যাখ্যামূলক বিভিন্ন সংযোগের ব্যবহার ।
3. বাস্তব জীবনের সঙ্গে যুক্ত অভিজ্ঞতার ব্যবহার ।
4. ব্ল্যাকবোর্ডের ব্যবহার , টিচিং এড বা শিক্ষণ উপকরণের ব্যবহার , ফ্লো – চার্ট – এর ব্যবহার ।
5. বিষয়ের সঙ্গে সংযুক্ত গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি নিয়ে আলোচনা করা । ব্যাখ্যরূণের সময় কতকগুলি প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়া অবশ্যই উচিত । যেমন—
1 অপ্রয়োজনীয় বাক্যের ব্যবহার ।
2. স্বাচ্ছন্দ্যের অভাব ।
3 ধারাবাহিকতার অভাব ।
4. ভ্রান্ত শব্দের ব্যবহার ।
C. দৃষ্টান্ত উল্লেখকরণ বা উদাহরণ সহযোগে ব্যাখ্যা : কিছু কিছু বিষয়বস্তু এবং ধারণা অপেক্ষাকৃত কঠিন হয় । তখন যথাযথ শিখন অভিজ্ঞতা সঞ্চারণের জন্য কেবল ব্যাখ্যাকরণ যথার্থ নয় । তখন উদাহরণ সহযোগে ব্যাখ্যার কথা বলা হয়ে থাকে । যে – কোনো ধারণার বা ঘটনার দৃষ্টান্ত বা উদাহরণ ব্যবহার করা হয়ে থাকে । যেসব দৃষ্টান্তের উল্লেখে দক্ষতাটিতে সাধারণত কোনো একটি বিষয়বস্তু বা ধারণার ব্যাখ্যা শিক্ষার্থীদের নিকট কতটা সহজভাবে উপস্থাপিত করা যায় সেই দৃষ্টান্তগুলি নির্বাচন করা হয় । আবার এই দৃষ্টান্ত যদি শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবন থেকে নেওয়া হয় তাহলে সেটি আরও বেশি সাহায্যকারী হয় । তবে ওই দৃষ্টান্তের অর্থ যাতে তারা অনুধাবন করতে পারে এবং দৃষ্টান্তটি যাতে তাদের আগ্রহ সৃষ্টিকারী হয় সেদিকেও নজর রাখা বিশেষ প্রয়োজন ।
কোনো বিষয়বস্তুর বিভিন্ন দিক ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সাধারণত উদাহরণ দেওয়ার প্রয়োজন হয় । উদাহরণ ভালো হতে পারে অথবা খারাপও হতে পারে । একটি ভালো ও যথার্থ উদাহরণের সাধারণত নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য থাকে—
1. উদাহরণগুলি অবশ্যই সাধারণ হবে ।
2. আলোচ্য বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে দৃষ্টান্তগুলি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাসঙ্গিক হবে ।
3. দৃষ্টান্তগুলি অবশ্যই আগ্রহব্যঞ্জক হবে । নাহলে শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সম্ভবপর হবে না ।
4. দৃষ্টান্তগুলিকে যথার্থ মাধ্যমের সাহায্যে প্রকাশ করতে হবে ।
5. অবরোহ এবং আরোহ পদ্ধতিতে দৃষ্টান্তের উপস্থাপন করতে হবে ।
D. উদ্দীপন বৈচিত্র্যসাধন : শ্রেণিকক্ষে শিক্ষণ – শিখন প্রক্রিয়াটির সঙ্গে বহু ক্রিয়াকর্ম জড়িত থাকে । এই প্রক্রিয়াটি একটি উদ্দীপন প্রতিক্রিয়া পদ্ধতির মধ্য দিয়ে চলতে থাকে । কিন্তু এই দক্ষতাটির ক্ষেত্রে উদ্দীপন হল শিক্ষকের সেই কার্যাবলি যা শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষের পঠনপাঠনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে আহ্বান করে এবং তাদের শিখন প্রক্রিয়ার সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে সংযুক্ত রাখতে সহায়তা করে । অর্থাৎ আমরা বলতে পারি যে , উদ্দীপন বৈচিত্র্যসাধন হল শিক্ষক দ্বারা প্রদর্শিত বিভিন্ন ধরনের উদ্দীপক যা শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখতে ও একঘেয়েমি পরিবেশ দূর করতে সহায়তা করে । শ্রেণিকক্ষে এইরূপ উদ্দীপন বৈচিত্র্য শিক্ষার্থীদের একঘেয়েমি পরিবেশ দূর করে ও তাদের শিখন পারদর্শিতা বৃদ্ধি করে । পাঠদানের সময় একজন শিক্ষক তাঁর আচার আচরণ ও অঙ্গভঙ্গি পরিবর্তন করেন , কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন করেন , পায়চারি করেন বা ঘুরে ফিরে পড়ান , কথা বলতে বলতে কখনো কখনো থেমে যান , বিশেষ কোনো শব্দ বারংবার ব্যবহার করেন । এভাবে তিনি উদ্দীপক বৈচিত্র্যসাধন করে থাকেন । উদ্দীপক বৈচিত্র্যসাধনের কতকগুলি আচরণাঙ্গ আছে । এগুলি হল—
1. শিক্ষকের নড়াচড়া বা পায়চারি : শিক্ষণদানের সময় শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে নিয়ন্ত্রিত পায়চারি বা শৃঙ্খলাবন্ধ নড়াচড়া করেন । শিক্ষক কখনও শ্রেণিতে ঘুরে ঘুরে পড়ান , কখনও বোর্ডের কাজ করেন , কখনও শিক্ষার্থীদের কাজগুলি প্রত্যেকের জায়গায় গিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন । এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণগুলি প্রদর্শন করেন ।
2. শিক্ষকের অঙ্গভঙ্গি : অঙ্গভঙ্গি বলতে বোঝায় শিক্ষকের বিভিন্নভাবে মস্তক হেলন , হাত নাড়া , চক্ষু সঞ্চালন এবং মুখাবয়বে নানান নাটকীয় ভাব প্রদর্শন ইত্যাদি । শিক্ষক শিক্ষণদানকালে প্রয়োজনমতো তাঁর অঙ্গ – ভঙ্গির পরিবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষণীয় বিষয়বস্তুকে শিক্ষার্থীদের নিকট আরও সহজবোধ্য ও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন ।
3. বক্তব্যের প্রকাশভঙ্গিমার পরিবর্তন : এর মধ্যে পড়ে প্রাক্ষোভিক প্রকাশভঙ্গিমার পরিবর্তন , গলার স্বর বা ভাষাগত সরবরাহের পরিবর্তন ।
4. ইন্দ্রিয়গত আলোকপাতের পরিবর্তন : এক্ষেত্রে শিক্ষকের কথা বলা বা কোনো কিছু প্রদর্শন করা বা উভয়কেই বোঝায় । অর্থাৎ শিক্ষাদানে তিনি ভাষাগত নির্দেশনাদান থেকে কোনো মডেল বা চিত্র প্রদর্শন করতে পারেন । আবার ছবি বা মডেল প্রদর্শন থেকে ভাষাগত নির্দেশনায় আসতে পারেন বা দুটি একই সঙ্গে করতে পারেন । এতে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন জ্ঞানেন্দ্রিয়গুলি সঞ্চালিত হয় এবং সেগুলি ক্রিয়া করে ও তাদের মনোযোগও বজায় রাখতে সাহায্য করে ।
5. শিক্ষার্থী – শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী – শিক্ষার্থী মতামত বিনিময়ের কৌশলের পরিবর্তন : এর মাধ্যমেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহদান করা সম্ভব ।
6. বিরতি : এর মানে কয়েক মুহূর্ত নীরব থাকা । শিক্ষক একটানা কোনো বিষয় না বুঝিয়ে মাঝে মাঝে বিরতি দিয়ে বোঝানোয় শিক্ষার্থীরা অনেক ভালোভাবে বিষয়টি বুঝে নিতে সক্ষম হয় । এতে তাদের মনোযোগও সহজে আকর্ষণ করা যায় , বিভিন্ন বিষয়গুলির সমন্বয় করা যায় এবং কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসার পর বিরতি দিলে । শিক্ষার্থীরা উত্তরটি সংগঠন করার সুযোগ পায় ।
7. শিক্ষার্থীদের শারীরিক সঞ্চালন : শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বোর্ডে আহ্বান করতে পারেন । বা তাদের কোনো মডেল বা ছবির প্রদর্শন করতে আহ্বান করতে পারেন ।
E. শিক্ষা – সহায়ক উপকরণের ব্যবহারের দক্ষতা : শ্রেণিকক্ষে ব্যবহৃত শিক্ষা – সহায়ক উপকরণগুলির মধ্যে ব্ল্যাকবোর্ডের গুরুত্ব উল্লেখযোগ্য । ব্ল্যাকবোর্ড বা চকবোর্ড হল শ্রেণিকক্ষের একটি সাধারণ উপকরণ । শ্রেণিকক্ষে কোনো বিমূর্ত বিষয়কে মূর্ত , স্পষ্ট ও দৃষ্টিগ্রাহ্য করে তুলতে ব্ল্যাকবোর্ডই হল সুলভ ও সর্বাপেক্ষা উপযোগী সামগ্রী । শিক্ষক ব্ল্যাকবোর্ডের কাজের যাবতীয় পরিকল্পনা করেন । পাঠের প্রয়োজনীয় অংশ বোর্ডে লেখেন , পাঠ সংক্রান্ত চিত্র অঙ্কন করেন , নকশা , মডেল , চার্ট , সময়রেখা , মানচিত্র আঁকতে পারেন — যা শিক্ষার্থীদের শিখনে প্রভূত সহায়তা করে । ব্ল্যাকবোর্ড ব্যবহারের সময় শিক্ষকের যে বিষয়গুলির প্রতি নজর দেওয়া উচিত সেগুলি—
1. পাঠের সেই বিষয়গুলি বা Teaching point- গুলি উল্লেখ করতে হবে যেগুলি কেবল ভাষাগতভাবে যথার্থরূপে তুলে ধরা যায় না ।
2 . সেই সমস্ত Teaching point- গুলি নির্বাচন করতে হবে যেগুলি অন্য কোনো শিক্ষা উপকরণের মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভবপর নয় ।
3. একটি পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে হবে যাতে পাঠের কোন বিষয় সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করা হবে এবং কী ধরনের চিত্র বা ডায়াগ্রাম অঙ্কন করা হবে ।
4. সূক্ষ্মভাবে এবং গভীরভাবে চিন্তা করে দেখতে হবে যে বোর্ডে যেটুকু তথ্য উল্লেখ করা হচ্ছে তা ওই বিষয়টির শিখনে শিক্ষার্থীদের যথার্থভাবে সহায়তা করছে কিনা ।
5. তথ্য পরিবেশনের সুবিধার জন্য বোর্ডটিকে কয়েকটি অংশে বিভক্ত করে নির্দিষ্ট । অংশে নির্দিষ্ট তথ্যের পরিবেশন করা যেতে পারে ।
6 . প্রাতিষ্ঠানিক তথ্য সরবরাহের জন্য যতটা সম্ভব বোর্ডের কম অংশ ব্যবহার করে । বাকি অংশটা নির্দেশনার প্রয়োজনে ব্যবহার করতে হবে ।
7. ব্ল্যাকবোর্ডে লেখার সময় যতটা সম্ভব সরলরেখায় লেখার চেষ্টা করতে হবে ।
8. বোর্ডে লেখার সময় দুটি শব্দ বা লাইনের মাঝে যাতে যথেষ্ট ফাঁকা জায়গা থাকে তা খেয়াল রাখতে হবে । অযথা তাড়াহুড়ো করা বা দীর্ঘ সময় ব্যয় করা— কোনোটাই এখানে কাম্য নয় ।
9. বোর্ডে লেখার সময় শিক্ষক বোর্ড – এর সঙ্গে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চলবেন এবং যতটা সম্ভব লেখার সময় শিক্ষার্থীরা যাতে তা দেখতে পায় সেই ব্যবস্থা করবেন ।
10. লেখার ক্ষেত্র স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ হতে হবে ।
11. যতটা সম্ভব শুদ্ধ বানান লেখার ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে ।