প্রশ্ন : যুব সংস্কৃতি কাকে বলে ? যুব সংস্কৃতি কি কোনো পৃথক সংস্কৃতি ? আপনার উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি দিন ।
উত্তর : যুব সংস্কৃতি : Rouck এবং Warne- এর মতে “ সংস্কৃতি হল সমাজের মধ্যে গড়ে ওঠা বৈশিষ্ট্য যা মানুষের জীবনধারণের মৌলিক চাহিদাগুলিকে পূরণ করে । যুবসংস্কৃতি হল কোনো সমাজের বয়ঃসন্ধিক্ষণ বা যুব বয়সের ব্যক্তিসমূহের মূল্যবোধ , তাদের আচার – আচরণ , আদর্শ , নীতিবোধ , বিশ্বাস ইত্যাদি ।
একদল গবেষক যুক্তিসহকারে মন্তব্য করেন যে প্রতিটি সমাজের যুবকদের মধ্যে পৃথক সংস্কৃতি দেখা যায় । এই মতের গবেষকগণ উল্লেখ করেন
( i ) যেহেতু যুবসম্প্রদায়ের মধ্যে এমন কিছু সাংস্কৃতিক উপাদান দেখা যায় যা তাদের পিতা – মাতার মধ্যে দেখা যায় না , তাই যুবসংস্কৃতি যে পৃথক সংস্কৃতি সে সম্পর্কে কোনো দ্বিমত থাকা উচিত নয় ।
( ii ) Janseen প্রমুখ মনোবিদ TMT ( Terror Mangement Theory ) নামে একটি মনস্তাত্ত্বিক ধারণার কথা উল্লেখ করেন যার অর্থ হল প্রতিটি ব্যক্তির জন্ম – মৃত্যুর ( Mortality ) সম্পর্কে সচেতনতা এবং তার সঙ্গে অভিযোজনের চেষ্টার কারণে সংস্কৃতির সূচনা হয় । যুবকগণ যদি এই বিষয়ে সচেতন হয় তাহলে তারা সাংস্কৃতিক কার্যাবলি এবং বিশ্বাসের প্রতি আস্থাশীল হয় । আর গবেষকগণ যুবকদের উপর পরীক্ষা করে যুবকদের মধ্যে এই বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন । তাই বলা যায় । যে , যুবসংস্কৃতির পৃথক অস্তিত্ব আছে ।
( iii ) সোয়ার্জ এবং মার্টন ( Schwartz & Merton ) যুবকদের ভাষা ব্যবহার লক্ষ করে । মন্তব্য করেন যেহেতু ভাষার ব্যবহার সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং এই ব্যবহারের দিক থেকে যুবকগণ নিজেদের মধ্যে যেসব শব্দ ব্যবহার করে তার সঙ্গে বয়স্কদের ব্যবহৃত শব্দের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য দেখা যায় । তাই যুবসংস্কৃতিকে একটি পৃথক সংস্কৃতি বলে অবশ্যই বিবেচনা করা যায় ।
( iv ) মনোবিজ্ঞানী এরিক এরিকসন ( Erick Erikson ) বলেন বয়ঃসন্ধিক্ষণের বালকদের অন্যতম সমস্যা হল “ আমি কে ” ( Who am I ) – এই প্রশ্ন অর্থাৎ নিজস্বতা বয়ঃসন্ধিক্ষণের অন্যতম প্রশ্ন । এই প্রশ্নের সমাধান তখনই হয় যখন বালকটি তার নিজস্বতা সম্পর্কে সচেতন হয় । এই সচেতনতা তাকে মূল্যবোধ , নীতিবোধ এবং অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে সচেতন করে । নিজের চিন্তাভাবনা , আদর্শ ইত্যাদি প্রতিফলিত হওয়ার ফলে বয়ঃসন্ধিক্ষণের বালকদের মধ্যে পৃথক সংস্কৃতি গড়ে ওঠে ।
আবার যেসব গবেষকগণ যুবসংস্কৃতিকে পৃথক বলতে অস্বীকার করেন তাদের যুক্তি হল—
( i ) যেহেতু মূল্যবোধ , নীতিবোধ ইত্যাদি সমাজের আদর্শ অনুযায়ী বিবেচিত হয় তাই যুবসংস্কৃতিকে ( যার নির্ধারক হল মূল্যবোধ এবং নীতিবোধ ) পৃথক সংস্কৃতি বলে গণ্য করা উচিত নয় ।
( ii ) যেহেতু যুবকদের মধ্যে আচরণ , চিন্তাভাবনা , পোশাক – পরিচ্ছদ , কথাবার্তা ভিন্ন ধরনের তাই এটি একটি পৃথক সংস্কৃতি — এই যুক্তিটি সঠিক নয় । কারণ বিভিন্ন সময়কালে যুবসম্প্রদায়ের মধ্যে ভিন্ন ধরনের মূল্যবোধ , নীতিবোধ , পোশাক পরিচ্ছদ , আচার – আচরণ দেখা যায় তাই কোনোভাবেই যুবসংস্কৃতিকে পৃথক সংস্কৃতি হিসেবে বিচার করা যায় না ।
( iii ) বিভিন্নক্ষেত্রে এবং সমবয়সিদের লিঙ্গ , বয়স এবং সামাজিক মর্যাদার পার্থক্যের প্রভাব ভিন্ন ভিন্ন হয় সেই কারণে যুবসংস্কৃতিকে একটি ভিন্ন সংস্কৃতি বলে স্বীকার করা যায় না ।
স্বপক্ষে যুক্তি : নিম্নে একাধিক দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হল যার ভিত্তিতে যুবসংস্কৃতিকে একটি পৃথক সংস্কৃতি হিসেবে সিদ্ধান্তগ্রহণ করা যায় ।
• পোশাক – পরিচ্ছেদ পছন্দের বিষয়ে এদের নিজস্বতা দেখা যায় । সংগীতের ক্ষেত্রে এরা একটি বিশেষ দলকে ( Group ) পছন্দ করে ।
• হেয়ার কাটিং – এ এরা বিশেষ ধরনের কাটিং পছন্দ করে ।
• পিতামাতারা যেসব বিষয়ে নিষেধ করে বা প্রত্যাশা করে না সেইসব বিষয় করার প্রতি এদের আগ্রহ দেখা যায় , যেমন — ধূমপান , মদ্যপান এবং ড্রাগসেবন । নিজেকে প্রদর্শনের জন্য এবং নিজেকে বিরোধী বলে প্রতিপন্ন করার জন্য এরা ছোটোখাটো অপরাধ করে এবং বিদ্যালয় ছুটি হওয়ার পূর্বেই চলে যায় ।
• এরা বিশেষ ধরনের বই পড়তে ভালোবাসে , যেমন কমিক বই , রহস্য উপন্যাস যা তাদের সমবয়সিরা পছন্দ করে ।
• সমবয়সি বালক – বালিকারা যে সংস্থার পোশাক , জুতো এবং অন্যান্য জিনিস পছন্দ করে তাই এরা পছন্দ করে । বিদ্যালয় , ধর্ম বা পরিবারের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দেখা যায় । অন্যান্যদের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এরা অধিকতর সহানুভূতিশীল হয় বা এড়িয়ে চলে ।