প্রশ্ন : মূল্যবোধ কাকে বলে ? ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় যে মৌলিক মূল্যবোধগুলির উল্লেখ আছে তা উল্লেখ করুন । ভারতীয় সংবিধানের প্রেক্ষাপটে আলোচনা করে দেখান—এই মূল্যবোধগুলি কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে ?
উত্তর : মূল্যবোধ বলতে বোঝায় সেই সমস্ত মানসিক প্রক্রিয়া , চিন্তাভাবনা , অনুভূতি , সেন্টিমেন্ট বা আবেগ যা ব্যক্তির সবদিকে আত্মবিকাশে সাহায্য করে । একই সঙ্গে মূল্যবোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হল এর ফলে পরিবার , কমিউনিটি এবং জাতির (ব্যক্তি যার সদস্য) কল্যাণ সাধন হয় ।
ভারতবর্ষের সংবিধানের প্রস্তাবনায় মৌলিক উল্লিখিত মূল্যবোধগুলি : শিক্ষার মধ্য দিয়ে প্রতিটি নাগরিকের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে । এই মূল্যবোধগুলি হল—
(1) গণতান্ত্রিক নীতি , যেমন—স্বাধীনতা , ক্ষমতা , ধৈর্য , অন্যের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি মর্যাদাদান এবং দলের সঙ্গে কাজ করার ক্ষমতা অর্জন ।
(2) সামাজিক নীতিসমূহ যেমন সকলের জন্য একই সুযোগ এবং সকলের প্রতি মর্যাদাদানে দায়বদ্ধতা , জাতীয় উৎপাদন এবং সম্পদকে সমভাবে বণ্টনকে মর্যাদা দান ।
(3) ধর্মনিরপেক্ষতা যেমন সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ , সব ধর্মের প্রতি সহিযুতা , নিজ নিজ ধর্মীয় অনুষ্ঠান করার স্বাধীনতা এবং ধর্ম যেন কোনো নাগরিকের অধিকারে বাধা হয়ে না ওঠে ।
মূল্যবোধের বাস্তবায়ন : সংবিধানের প্রস্তাবনায় যে মূল্যবোধগুলির উল্লেখ আছে তাকে ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে আমাদের অর্থাৎ ভারতবর্ষের শিক্ষাদর্শন । একই সঙ্গে জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার যে রূপরেখা তৈরি হয়েছে তার উৎস হল আমাদের সংবিধান । সংবিধানের মধ্য দিয়েই সংবিধানকে ভিত্তি করেই আমাদের জীবনদর্শন , সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং শিক্ষাসংক্রান্ত চিন্তাভাবনা , শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিটি ত্রেই যেমন শিক্ষার লক্ষ্য , পাঠক্রম , শিক্ষা – শিখন প্রক্রিয়া , শিক্ষাব্যবস্থাপনা , শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা ইত্যাদি সংবিধানের মূল্যবোধগুলির ভিত্তিতেই রূপায়িত করার চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু বাস্তবে কতটা সফল হয়েছে সে সম্পর্কে প্রশ্ন থেকে যায় । শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে বিশেষ করে প্রারম্ভিক শিক্ষা স্তরে বর্তমান জনগণের প্রায় 95 % সুযোগ পেলেও শিক্ষার গুণগতমানের ক্ষেত্রে সমতা দেখা যায়নি । এ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রবন্ধ সমীক্ষা থেকে দেখা যায় সুবিধাভোগী এবং বিত্তশালী জনগণের শিশুরা যে ধরনের উন্নতমানের সুযোগ পায় , সমাজের দরিদ্র অংশ এবং বঞ্চিত জনগণ সেই ধরনের উচ্চমানের শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না । তাদের নিম্নমানের শিক্ষাগ্রহণ করতে হচ্ছে । শিক্ষাক্ষেত্রে জাত – পাত , ধর্ম – লিঙ্গ বিভেদ এখনও প্রত্যাশিত মাত্রায় কার্যকরী হয়নি । তপশিলি জাতি – উপজাতি , মুসলিম সম্প্রদায় এবং বালিকাদের শিক্ষার হার এখনও কম ।
পরিশেষে বলা যায় শিক্ষায় সমতা আনয়নের জন্য শিক্ষায় সুযোগসুবিধা , আঞ্চলিক বৈষম্য , দারিদ্র্য এবং বিত্তশালী ঘরের শিশুদের প্রতি সমদৃষ্টি দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে যা কেবলমাত্র কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় বাস্তবায়িত হওয়া সম্ভব ।