ব্যাহত বাচনক্ষমতাসম্পন্ন শিশু কাদের বলে ? মূক ও বধির শিশু কাকে বলে ? মূক ও বধিরতার কারণ লিখুন । বধির শিশুদের শ্রেণিবিভাগ করুন । মূক ও বধির শিশুদের শিক্ষণ পদ্ধতি লিখুন । মূক ও বধির শিশুদের সমস্যা লিখুন

প্রশ্ন : ব্যাহত বাচনক্ষমতাসম্পন্ন শিশু কাদের বলে ? মূক ও বধির শিশু কাকে বলে ? মূক ও বধিরতার কারণ লিখুন । বধির শিশুদের শ্রেণিবিভাগ করুন । মূক ও বধির শিশুদের শিক্ষণ পদ্ধতি লিখুন । মূক ও বধির শিশুদের সমস্যা লিখুন ।

উত্তর : ব্যাহত দৃষ্টিসম্পন্ন শিশু : যে সকল শিশুরা মূক ও বধির তারা কানে শুনতে পায় । না এবং কথা বলতেও পারে না—তাদের ব্যাহত বাচন ক্ষমতাসম্পন্ন শিশু বলে ।

মূক ও বধির শিশু : যেসব শিশু কথা বলতে পারে না , তাদের মুক বা বোবা (Dumb) বলে এবং যেসব শিশু শুনতে পায় না , তাদের বধির বা কালা (Deaf) বলে । মুকত্ব ও বধিরত্বের মধ্যে একটি নিবিড় সম্পর্ক বর্তমান ।

মুকত্বের কারণ : স্বরযন্ত্রের ত্রুটির কারণে অনেকের কথার মধ্যে আড়ষ্টতা বা অস্পষ্টতা দেখা দেয় । আবার স্বরযন্ত্রের ত্রুটির মাত্রা খুব বেশি হলে ছেলেমেয়েরা একেবারেই কথা বলতে পারে না । এই জাতীয় ছেলেমেয়েদের সম্পূর্ণ মূক বলে । স্বরযন্ত্রের ত্রুটি জন্মগত , দুর্ঘটনাজনিত বা রোগব্যাধির ফলে হতে পারে । স্বরযন্ত্র ত্রুটিহীন হওয়া সত্ত্বেও শ্রবণশক্তির ত্রুটির কারণে বহু ছেলেমেয়ে মুক হয় ।

বধিরতার কারণ : শ্রবণ ইন্দ্রিয় তথা কানের কোনো অংশে ত্রুটি দেখা দিলে শ্রবণ ক্রিয়া ব্যাহত হয় । কানের ঠিক কোন্ অংশে কী জাতীয় ত্রুটি হয়েছে , তার উপর ভিত্তি করে শ্রবণজনিত ত্রুটি বিভিন্ন প্রকারের হয় । কানের ত্রুটি বহিঃকর্ণ থেকে শুরু করে মধ্যকর্ণ ও অন্তঃকর্ণে হয়ে থাকে । অনেক সময় শ্রবণজনিত ত্রুটি মারাত্মক আকারও ধারণ করে । শ্রবণজনিত ত্রুটি থেকেই ছেলেমেয়েরা বধির বা আংশিক বধির হয় । শ্রবণজনিত ত্রুটি অনেক সময় জন্মগত হয় । আবার এমনও ঘটে , স্বাভাবিক শিশু বিভিন্ন রোগব্যাধির কারণে বা দুর্ঘটনার ফলে শ্রবণক্ষমতা হারায় । শ্রবণজনিত ত্রুটির ফলে ছেলেমেয়েরা একদিকে যেমন শুনতে পায় না , অন্যদিকে কথা বলতে না শেখায় বোবায় পরিণত হয় । বোবা ছেলেমেয়েদের ভাষাগত বিকাশও ঘটে না ।

বধির শিশুদের শ্রেণিবিভাগ : বধির শিশুদের বিভিন্নভাবে ভাগ করা যায় । যেমন—

(1) মাত্রানুযায়ী শ্রেণিবিভাগ ,

(2) বয়স অনুযায়ী শ্রেণিবিভাগ ,

(3) ভাষাগত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী শ্রেণিবিভাগ ,

(4) কর্ণের ত্রুটি অনুযায়ী শ্রেণিবিভাগ এবং

(5) কেন্দ্রীয় বধিরতা অনুযায়ী শ্রেণিবিভাগ । এগুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল—

(1) মাত্রানুযায়ী বধিরতা : শ্রবণজনিত ত্রুটির মাত্রানুযায়ী শিশুদের প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । এদের একটি হল বধির (Deaf) এবং অন্যটি হল আংশিক বধির (Hard of hearing) । বধির বলতে সেইসব শিশুদের বোঝায় যারা সম্পূর্ণরূপে শ্রবণক্ষমতা হারিয়েছে । এইসব শিশুদের শ্রবণমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও এরা শ্রবণের অনুভূতি গ্রহণ করতে পারে , অর্থাৎ শুনতে পায় না । অন্যদিকে আংশিক বধির বলতে সেইসব শিশুদের বোঝায় যাদের মধ্যে শ্রবণের ক্ষমতা অল্প হলেও বর্তমান । এসব শিশুদের শ্রবণমূলক প্রশিক্ষণ দিলে বা শ্রবণযন্ত্র ব্যবহার করলে এই ধরনের শিশুরা আংশিক হলেও শুনতে পায় ।

ভারত সরকারের জনকল্যাণ মন্ত্রকের তথ্যের ভিত্তিতে মাত্রানুযায়ী বধিরতাকে ছয়ভাগে ভাগ করা হয় । ভাগগুলি হল—

বাইরের কোনো উৎস থেকে সৃষ্ট শব্দতরঙ্গ বহিঃকর্ণের পর্দায় গিয়ে আঘাত করলে , যে কম্পনের সৃষ্টি হয় , সেই কম্পন এসে মধ্যকর্ণের অস্থি তিনটির মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে ককলিয়াতে পৌঁছোয় । ককলিয়ার অন্তঃলসিকা ও বহিলসিকা আন্দোলিত হয় এবং অডিটরি নার্ভের মাধ্যমে শ্রবণের অনুভূতি মস্তিষ্কের শ্রবণ অঞ্চলে পৌঁছোলে আমরা শুনতে পাই । এই শোনার ক্ষেত্রে তিন ধরনের ত্রুটি লক্ষ করা যায় , যথা—

(i) বহিঃকর্ণ ও মধ্যকর্ণের গঠনগত কোনো সমস্যা থেকে শ্রবণ সঞ্চারণের বধিরতা (Conductive loss) ,

(ii) অন্তঃকর্ণের ককলিয়া এবং অর্ধবৃত্তাকার নালি থেকে বহির্গত স্নায়ুজনিত বধিরতা (Sensory Neural loss) এবং

(iii) প্রথম ও দ্বিতীয় উভয় প্রকার ত্রুটি মিলিয়ে মিশ্র ত্রুটি (Mixed loss) ।

(5) কেন্দ্রীয় বধিরতা : এই প্রকার বধিরতা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান অংশ মস্তিষ্কের শ্রবণকেন্দ্রের ত্রুটির ফলে ঘটে থাকে ।

মূক ও বধির শিশুদের শিক্ষণ পদ্ধতি লিখুন : মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের মধ্যে যারা আংশিকভাবে বধির তাদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে শ্রুতিসহায়ক যন্ত্র ব্যবহার করলে এবং তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিলে তারা স্বাভাবিক ছেলেমেয়েদের মতো কথাবার্তা বলতে এবং শুনতে পারে । কিন্তু যারা সম্পূর্ণরূপে মুক ও বধির তাদের জন্য নিম্নলিখিত শিক্ষাদান পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়—

(1) ওষ্ঠ-পঠন : বক্তার কথা বলার সময় তার ঠোঁট নড়াচড়া দেখে কথা বা ভাব বুঝতে পারাকে ওষ্ঠ – পঠন বা বাক্ – পঠন বলা হয় । মূক ও বধির ছেলেমেয়েরা বক্তার মুখের সামগ্রিক পরিবর্তন , নড়াচড়া ইত্যাদি লক্ষ করে বক্তার কথা বোঝার চেষ্টা করে থাকে । পরে একইভাবে ঠোটের সঞ্চালন দেখে তারা ভাষা শিখে থাকে । এই পদ্ধতির আর – এক নাম মৌখিক পদ্ধতি । এর প্রবর্তক হলেন জুয়ান পাবলো বনে ।

(2) আঙুলের দ্বারা বানান শেখা : যেসব ছেলেমেয়ে সম্পূর্ণরূপে বধির তারা মনের ভাব প্রকাশের জন্য আঙুল সঞ্চালনের সাহায্য নেয় । তাদের এ বিষয়ে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় । আঙুল সঞ্চালনের মাধ্যমে এই ছেলেমেয়েদের অক্ষর , শব্দ , বাক্য ও বানান লেখা সহজে শেখানো যায় । এই সঞ্চালন পদ্ধতির প্রবর্তক হলেন পেরিয়ার । ভারতে এই পদ্ধতি করপল্লবী (Karapallavi) নামে পরিচিত ।

(3) কম্পন ও স্পর্শ পদ্ধতি : এই পদ্ধতিতে মূক ও বধির ছেলেমেয়েরা অভিজ্ঞ শিক্ষকের কথা বলার সময় তাদের মুখে হাত বুলিয়ে , গলা স্পর্শ করে শব্দ উচ্চারণ করতে শেখে । কম্পন ও স্পর্শ পদ্ধতিটি আবিষ্কার করেন কেটি অ্যালকর্ন ও সোফিয়া অ্যালকর্ন ।

(4) শ্রবণসহায়ক পদ্ধতি : এই পদ্ধতিটি মূলত আংশিকভাবে বধির ছেলেমেয়েদের পড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয় । উচ্চশক্তিসম্পন্ন শ্রবণসহায়ক যন্ত্রের সাহায্যে আংশিক ১০ বধিরদের বধিরতা অনেকটা দূর করা যায় ।

(5) দর্শনভিত্তিক পদ্ধতি : মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের দর্শনভিত্তিক পদ্ধতিতেও মনের ভাব প্রকাশের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় । এতে কয়েকটি প্রতীক ব্যবহার করা হয় । শিক্ষক মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের এইসব প্রতীকের ব্যবহার শিখিয়ে দেন । তারা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শিক্ষকের মতো মুখভঙ্গি করে শব্দ উচ্চারণ করার চেষ্টা করে এবং ধীরে ধীরে তা আয়ত্ত করে ।

উপরিউক্ত পদ্ধতিগুলির দ্বারা মূক ও বধিরদের শিক্ষাদান করতে গেলে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধৈর্যশীল শিক্ষক – শিক্ষিকার প্রয়োজন হয় । বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে এই ধরনের ছেলেমেয়েদের ভাষাবিকাশ ও পাঠদানের জন্য গবেষণা চলছে ।

মূক ও বধির শিশুদের সমস্যা লিখুন : মূক ও বধির শিশুদের শিক্ষার ক্ষেত্রে নানান সমস্যা লক্ষ করা যায় । কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করা হল—

(1) মানিয়ে নেওয়ার সমস্যা : মৃক এবং বধির ছেলেমেয়েরা স্বাভাবিক ছেলেমেয়েদের মতো পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে না । আবেগপ্রবণ এবং আত্মকেন্দ্রিক হওয়ায় তারা নিজেদের সমাজ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে । বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা অন্তর্মুখী হয় , ফলে অন্যের সঙ্গে মেলামেশা পছন্দ করে না ।

(2) সামাজিক স্বীকৃতিগত সমস্যা : মুক ও বধির ছেলেমেয়েরা কথা বলতে পারে না । তাই পারস্পরিক ভাব বিনিময় হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায় । এর ফলে সমাজের অন্যান্য মানুষের সঙ্গে মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের দূরত্ব ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে । সেই কারণে তাদের মধ্যে সামাজিক স্বীকৃতিগত সমস্যা প্রকট হয় ।

(3) শিক্ষাজনিত সমস্যা : মূক ও বধির শিশুরা স্বাভাবিক ছেলেমেয়েদের মতো নির্দিষ্ট বয়সে বিদ্যালয়ে ভরতি হতে পারে না , বেশি বয়সে ভরতি হওয়ার ফলে সমবয়সি ছেলেমেয়েদের তুলনায় তারা অনেকটা পিছিয়ে পড়ে । পড়াশোনায় নানা অসুবিধার জন্য তারা ভালো ফল করতেও পারে না ।

(4) প্রাক্ষোভিক সমস্যা : মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের মধ্যে একটি বিশেষ সমস্যা হল প্রাক্ষোভিক সমস্যা । তারা যেহেতু অন্যের কথা বুঝতে পারে না এবং অন্যকে নিজের কথা বোঝাতে পারে না , তাই তাদের মধ্যে প্রক্ষোভঘটিত সমস্যা লক্ষ করা যায় । আচমকাই যে – কোনো ব্যাপারে তারা উত্তেজিত হয়ে পড়ে , আবার কখনো কখনো অশোভন আচরণও করে । তারা অত্যন্ত স্পর্শকাতর হয় । উপরের আলোচনা থেকে বলা যায় , মূক ও বধিরদের সব সমস্যার মূলে রয়েছে ভাষাগত অনগ্রসরতা । ভাষাগত বিকাশের পরিপূরক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলে এই ধরনের সমস্যাসমাধানের পথ সুগম হবে ।

Related posts:

বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীদের জীবন কথা
পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী : 2024
চন্দ্রযান-3 : চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণকারী প্রথম দেশ ভারত
GENERAL STUDIES : TEST-2
GENERAL STUDIES : 1
কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স: 8ই সেপ্টেম্বর
'জ্ঞানচক্ষু' গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
তপনের জীবনে তার ছোটো মাসির অবদান আলোচনা করো।
সমান্তরাল আলোকরশ্মিগুচ্ছ বলতে কী বোঝ ?
আলোকরশ্মিগুচ্ছ বলতে কী বোঝায় ? এটি কয়প্রকার ও কী কী ?
একটি সাদা কাগজকে কীভাবে তুমি অস্বচ্ছ অথবা ঈষৎ স্বচ্ছ মাধ্যমে পরিণত করবে ?
ঈষৎ স্বচ্ছ মাধ্যম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
অস্বচ্ছ মাধ্যম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
স্বচ্ছ মাধ্যম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
অপ্রভ বস্তুও কি আলোর উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে?
বিন্দু আলোক - উৎস কীভাবে পাওয়া যেতে পারে ?
বিন্দু আলোক - উৎস ও বিস্তৃত আলোক - উৎস কী ?
অপ্রভ বস্তু কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
স্বপ্নভ বস্তু কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
দিনেরবেলা আমরা ঘরের ভিতর সবকিছু দেখতে পাই , কিন্তু রাত্রিবেলা আলোর অনুপস্থিতিতে কোনো জিনিসই দেখতে পা...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page