প্রশ্ন : পাঠক্রম পরিব্যাপ্ত শিক্ষণবিজ্ঞানে তথ্য ও সংযোগসাধন প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে লিখুন ।
উত্তর : বর্তমান । যুগ হল প্রযুক্তিনির্ভর । আমাদের শ্রেণিকক্ষেও প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তির প্রবেশ ঘটছে । প্রযুক্তি সমৃদ্ধ শিখনে শিক্ষকের ভূমিকা বর্তমানে একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় বিষয় । প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যে সমস্ত নতুন উদ্ভাবনী এসেছে সেগুলি শিক্ষককে শিক্ষাতাত্ত্বিক , পেশাগত ও ব্যবস্থাপক ক্ষেত্রে নতুন জ্ঞানের সন্ধানে এগিয়ে দিচ্ছে ও তাকে আরও দায়বদ্ধ করে তুলছে । শিক্ষণের ক্ষেত্রে ‘ Pedagogy ‘ শব্দটিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । Hank Setal ( 1986 ) বর্ণনা করেছেন , ‘ Pedagogy ‘ হল ‘ Principles , Practice or Profession of Teaching ‘ অর্থাৎ শিক্ষণের নীতি ও এর ব্যাবহারিক দিক । Pedagogy’- এর সঙ্গে শিক্ষণের প্রযুক্তি কীভাবে সম্পর্কযুক্ত । শিক্ষণের ‘ Pedagogy’- তে যে বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত সেগুলি হল ‘ শিক্ষণ ’ , ‘ শিখনের স্থান ’ , ‘ বিষয়বস্তু ’ ও পদ্ধতি । আর এই শিক্ষকতাত্ত্বিক বিষয় বা শিক্ষণের নীতি ও তার ব্যাবহারিক দিককে কখনোই তার আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট থেকে পৃথক করা যায় না । সেই কারণে শিক্ষণ – শিখনের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিকে অন্তর্ভূক্ত । করা এবং তার প্রয়োগ অনেক জটিল হয়ে পড়ে । সাধারণত কোনো দেশের সাংস্কৃতিক ও দার্শনিক বিশ্বাস ও চিন্তাধারার উপর ওই দেশের জাতীয় পাঠক্রমের নকশা ও শিক্ষাতাত্ত্বিক দিক অনেকাংশে নির্ভরশীল , আবার এই নীতিগুলি বিদ্যালয় স্তরে গৃহীত হয় । তার উপর নির্ভর করে কীভাবে শিক্ষক নির্দিষ্ট পাঠের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করবেন । পাঠক্রমের বিষয়বস্তু ও উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যই শিক্ষকদের নিকট বিভিন্ন প্রত্যাশা তুলে ধরে ।
শিক্ষকের প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে সমস্ত সমস্যা আসছে সেগুলি হল—
1. প্রয়োজনীয় সম্পদের অভাব ।
2. বিভিন্ন উপকরণগুলির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগের অভাব ।
3. কোন্ ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার দ্বারা কী অর্জন করা যায় সেই সম্পর্কে অনিশ্চয়তা ।
4. নির্দিষ্ট প্রযুক্তির সঙ্গে কী ধরনের শিক্ষাতাত্ত্বিক বিষয় ও কৌশল সম্পর্কযুক্ত সেই সম্পর্কে যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব ।
5. প্রযুক্তির ব্যবহার দ্বারা শিখন অর্জিত হয় তার বিচারকরণ ও মূল্যায়নের যথাযথ ফলাফলের অনিশ্চয়তা ।
6. শ্রেণিকক্ষ ও আচরণসমূহের ব্যবস্থাপনায় উদ্ভূত বিষয়সমূহ ।
7. নির্দিষ্ট শিখন উদ্দেশ্যাবলির পুরণের প্রতি চাহিদা যা সকল সময় প্রযুক্তি পূরণ করতে পারে না ।
বিভিন্ন বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে কী ধরনের শিক্ষণ পদ্ধতি যথাযথ হবে তা বিচারবিবেচনা করা এবং শিখনের ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করা অত্যন্ত কঠিন কাজ । নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারও অনেকটাই চ্যালেঞ্জপূর্ণ । আবার বর্তমান প্রযুক্তিগত অগ্রগতির যুগে প্রযুক্তির ব্যবহার ভিন্ন পাঠদানও অনেকটাই একঘেয়েমিপূর্ণ হয়ে পড়ে এবং শিক্ষার্থীরাও বৈচিত্র্যধর্মী পাঠের পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হয় । সেই কারণে যথাযথ শিক্ষাতাত্ত্বিক কাঠামোর মধ্যে প্রযুক্তির ব্যবহারের যথাযথ পরিকল্পনা করতে হবে । প্রতি ক্ষেত্রেই এর একটি বিষয়গত মাত্রা থাকবে । এর একটি শিক্ষাতাত্ত্বিক ও দ্বান্দ্বিক দিক থাকবে , যা শিখন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে ।
শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও প্রেষণা সঞ্চারসহ তাদের যে – কোনো কার্যাবলি দায়বদ্ধতার সঙ্গে করার জন্য শিক্ষককে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে ।
শিক্ষক যাতে শিক্ষণ – শিখনের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত জ্ঞান যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারেন সেজন্য কর্মপূর্ব ও কর্মমধ্য প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে । প্রযুক্তি শিখনের কতকগুলি নীতি আছে । এগুলি যদি প্রশিক্ষণের স্তরে ব্যবহার করা হয় তাহলে শিক্ষকরা সহজেই প্রযুক্তিতে পারদর্শী হয়ে উঠবেন । নীচে এগুলি আলোচনা করা হল—
• পেশাগত জ্ঞানের সঙ্গে প্রযুক্তি শিখনের সংযোগসাধন প্রযুক্তি শিখন অবশ্যই শিক্ষকদের পেশাগত জ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হবে যা তাদের পেশাগত কার্যাবলিকে নির্দেশিত করবে । শিক্ষকদের পেশাগত জ্ঞানের সঙ্গে সঙ্গে তাদের প্রেক্ষাপটগত ক্ষেত্রে অর্থাৎ নির্দিষ্ট বিষয় ও পদ্ধতির নির্দেশদান প্রযুক্তি সম্পর্কে তাদের ওয়াকিবহাল করতে হবে । এক্ষেত্রে যা যা করা দরকার তা হল , যদি অর্থনীতি বা সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক নতুন নতুন সামাজিক সমস্যা বা সাম্প্রতিক ঘটনাবলিকে পাঠের সঙ্গে সংযুক্ত করতে চান সেক্ষেত্রে তিনি ‘ internet ‘ থেকে ।