স্বল্পস্থায়ী স্মৃতি

📚 স্বল্পস্থায়ী স্মৃতি ( Short – term Memory ) :

🧾 সংবেদনজাত তথ্য সংবেদনমূলক পর্যায় অতিক্রম করে সেকেন্ডের মধ্যে অন্তর্হিত অথবা স্বল্পস্থায়ী স্মৃতি পর্যায়ে চলে যায় । Atkinson তাঁর তত্ত্বে বলেছেন , স্মৃতির এই পর্যায়ের স্থায়িত্বকাল সংবেদনমূলক স্মৃতির স্থায়িত্ব থেকে বেশি হলেও ( 30 সেকেন্ড ) যথেষ্ট নয় । এই স্তরকে সচেতন সক্রিয় স্তর বলে । এই স্তরে তথ্যের পরিবর্তন ও পরিমার্জন এমনভাবে করে নেওয়া হয় যাতে ব্যক্তি তার নিজের মতাে করে স্মৃতিতে সঞ্চিত করতে পারে ।

একেই তথ্যের প্রক্রিয়াকরণ বলে । এখানে উল্লেখযােগ্য যে , ইন্দ্রিয় যে সংবেদন গ্রহণ করে ঠিক সেই । সংবেদন স্মৃতিতে থাকে না , থাকে পরিবর্তিত অবস্থায় । বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্নভাবে তথ্যের প্রক্রিয়াকরণ করে এবং সেই তথ্য সঞ্চিত থাকে । এই সঞ্চিত তথ্য সংকেতের মাধ্যমে থাকে , যাকে বলে সংকেতায়ন ( encoding ) এবং বিপরীত সংকেতায়ন ( decoding ) করে তথ্য পুনরুদ্রেক করা হয় ।

📑 পরবর্তী পর্যায়ে তথ্যগুলি অল্প স্থায়ী স্মৃতি থেকে অন্তর্হিত হয় অথবা দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিতে পরিণত হয় । ব্যক্তি কী ধরনের প্রতিক্রিয়া করবে তাও এই পর্যায়ের স্মৃতি অর্থাৎ স্বল্প স্থায়ী স্মৃতি ঠিক করে , সেজন্য স্বল্পস্থায়ী স্মৃতিকে অনেকে কার্যকারী স্মৃতি ( working memory ) বলে ।

📑 স্বল্পস্থায়ী স্মৃতিকে দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিতে রূপান্তরিত করার জন্য ব্যক্তি অনেক কৌশল ব্যবহার করে । ওই কৌশলগুলিকে দু – ভাগে ভাগ করা হয় । অ–গভীর কৌশল ( Surface Strategy ) এবং গভীর কৌশল ( Deep Strategy ) । অ – গভীর কৌশলের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল পুনরাবৃত্তি । শিশুরা কোনাে ছড়া বা কবিতা মুখস্থ করতে বারংবার পাঠ করে । শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার পূর্বে প্রশ্নোত্তর বারবার পড়ে মুখস্থ করে । এই সমস্ত ক্ষেত্রে পাঠ্যাংশটি শিক্ষার্থী তার পূর্বাৰ্জিত অভিজ্ঞতার সঙ্গে সমন্বিত করে মনে রাখে না । বিষয়বস্তু হুবহু পাঠ করে , মুখস্থ করে যার ফলে ওইগুলি যথেষ্ট দীর্ঘস্থায়ী হয় না ।

যথেষ্ট দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে মাঝে মাঝেই পুনরাবৃত্তির প্রয়ােজন ।

🧾 দ্বিতীয় আর – একটি অ – গভীর কৌশল হল নেমনিক পদ্ধতি । একাধিক নেমনিক পদ্ধতি আছে ( আমরা পূর্বে আলােচনা করেছি ) , যার মধ্যে বহুল প্রচলিত পদ্ধতি হল প্রথম অক্ষরের ব্যবহার ( Initial Word Method ) । এখানে স্মৃতির বিষয়ে প্রথম অক্ষরটি নিয়ে একটি শব্দ গঠন করা হয় । যেমন— সূর্যরশ্মির বিশ্লেষণে যে 7 টি রং পাওয়া যায় তাকে মনে রাখার জন্য VIBGYOR শব্দ ব্যবহার করা হয় । সরল অঙ্কে কোন্ চিহ্নটি আগে ব্যবহার করা হবে সেজন্য BODMAS শব্দটি ব্যবহার করা হয় ।

🧾 গভীর কৌশলে তথ্যগুলি পূর্বাৰ্জিত তথ্যের সঙ্গে যুক্ত করা হয় । বিভিন্ন রকমের গভীর কৌশলের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল শ্রেণিকরণ । সংবেদনগত তথ্য শ্রেণিকরণের মাধ্যমে অভিজ্ঞতার সঙ্গে যুক্ত করা হয় , যার ফলে তথ্য দীর্ঘ সময়ের জন্য স্মৃতিতে থাকার সম্ভবনা অধিক ।

🧾 স্বল্পস্থায়ী স্মৃতির ক্ষেত্রে সংবেদনগত তথ্য যদি অ – গভীর কৌশল দ্বারা প্রক্রিয়াকরণ করা হয় সেক্ষেত্রে শীঘ্র ভুলে যাবার সম্ভবনা থাকে । আর যদি গভীর কৌশলের দ্বারা প্রক্রিয়াকরণ করা হয় তাহলে স্মৃতির স্থায়িত্ব অনেক বেশি হয় । আশুবেলের অর্থপূর্ণ শিখন ও ব্রুনারের উদ্ভাবনী শিখন প্রক্রিয়াটি গভীর কৌশলের সাহায্যে করা হয় বলে দীর্ঘ দিন মনে থাকে।