⏹ পরিবেশবিদ্যা কী বহুমাত্রিক বা মালটিডাইমেনশনাল বিষয় ?
🔔 পরিবেশবিদ্যা তার প্রকৃতি ও বিষয়বস্তু অনুসারে বহুমাত্রিক বা মালটিডাইমেনশনাল ( multi dimensional ) বিষয়।
🔔 কারণ পরিবেশবিদ্যার চর্চা – আইন , বিজ্ঞান ও মানবীয় বিষয়গুলি ( Humanities ) থেকে আহরিত তথ্য , ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের ওপর নির্ভরশীল যেমন —
⏯️ আইন ও পরিবেশবিদ্যার মধ্যে সম্পর্ক :
আইনশাস্ত্র পরিবেশ বিষয়ক আইনগুলি তৈরি করতে ও প্রয়ােগ করতে সাহায্য করে ।
⏯️ দর্শন ও পরিবেশবিদ্যার মধ্যে সম্পর্ক :
দর্শন শাস্ত্র মানুষকে জীবন ও পৃথিবীর মূল সত্যগুলি অনুসন্ধান করতে শেখায় । পরিবেশের নীতিগুলি এমনই অলঙ্ঘনীয় সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত যার ব্যাখ্যা দর্শনশাস্ত্র থেকে পাওয়া যায় ।
⏯️ অর্থনীতি ও পরিবেশবিদ্যার মধ্যে সম্পর্ক :
অর্থনীতি মানুষকে শেখায় কীভাবে সে পরিবেশ থেকে পাওয়া প্রয়ােজনীয় সম্পদগুলিকে উৎপাদনের প্রয়ােজনে ব্যবহার করে এবং উৎপাদিত দ্রব্যগুলি কীভাবে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বণ্টিত হয় । সুতরাং অর্থনীতি পরিবেশে সম্পদভিত্তিক কাজকর্মের বিচার বিশ্লেষণ করে । এছাড়া বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে আলােকপাত করে ।
⏯️ রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও পরিবেশবিদ্যার মধ্যে সম্পর্ক :
নাগরিক হিসেবে মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং পরিবেশ সম্পর্কে দেশ ও আন্তর্জাতিক মঞ্চে মানুষের দায়িত্ব বৃদ্ধির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গুরুত্ব অপরিসীম ।
⏯️ গণিত , সংখ্যাতত্ত্ব ও পরিবেশবিদ্যার মধ্যে সম্পর্ক :
পরিবেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলি থেকে যে তথ্য পাওয়া যায় , তার বিশ্লেষণ , ব্যাখ্যা এবং ভবিষ্যতে হ্রাস – বৃদ্ধির হার সম্পর্কে নির্ভরযােগ্য পর্যালােচনার জন্য গণিত ও সংখ্যাতত্ত্বের প্রয়ােগ একান্ত প্রয়ােজন ।
⏭️ রসায়ন ও পরিবেশবিদ্যার মধ্যে সম্পর্ক :
পরিবেশের বিভিন্ন অংশে যেমন জল , মাটি , বায়ুতে বিভিন্ন রাসায়নিক ও দূষকগুলি কী পরিমাণে রয়েছে , ওই রাসায়নিক ও দূষকগুলি মানুষ , উদ্ভিদ ও প্রাণীদের কীভাবে প্রভাবিত করে ইত্যাদি বিষয়গুলি রসায়নবিদ্যার হাত ধরে আমরা জানতে পারি ।
⏯️ পদার্থবিদ্যা ও পরিবেশবিদ্যার মধ্যে সম্পর্ক :
পরিবেশকে জানা , বােঝা ও পরিমাপ করার জন্য যত ধরনের যন্ত্রপাতি আমরা ব্যবহার করি তার ভিত্তিই হল পদার্থবিদ্যা । শুধু তাই নয় , জলবায়ু পরিবর্তনকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে , বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পরিবেশবান্ধব ‘ গ্রিন ’ জ্বালানি ব্যবহার করতে হলে , পরিবেশের উন্নয়নের জন্য পরিকাঠামাে গড়ে তুলতে হলে পদার্থবিদ্যার নীতি ও সূত্রগুলি প্রয়ােগ করতে হয় ।
⏯️ জীববিজ্ঞান ও ইকোলজি ও পরিবেশবিদ্যার মধ্যে সম্পর্ক :
জীববিজ্ঞানের উন্নতির মাধ্যমে মানুষ উদ্ভিদ ও প্রাণীদের সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ জ্ঞান আহরণ করতে সমর্থ হয়েছে । ফলে পরিবেশ ও জীবের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক অনুসন্ধানের মধ্যে দিয়ে ইকোলজি নামক বিজ্ঞানটিরও জন্ম হয়েছে । উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক একটি উপকূলবর্তী অঞ্চলে শিল্পস্থাপন করলে ওই অঞ্চলের উদ্ভিদ , প্রাণী , জল , মাটির ওপর তার কী প্রভাব পড়বে সে বিষয়ে জানতে হলে জীববিজ্ঞান ও ইকোলজির প্রয়ােগ দরকার হবে ।
⏭️ ভূতত্ত্ব ও ভূগােল ও পরিবেশবিদ্যার মধ্যে সম্পর্ক :
পরিবেশবিদ্যার সামগ্রিক ক্ষেত্রে ভূতত্ত্ব ও ভূগােল শাস্ত্রের অবদান আছে । জলাভূমি , ওয়েস্টল্যান্ড ( wasteland ) , মরুভূমি ও মরুভূমিকরণ , দুর্যোগ ও বিপর্যয় ইত্যাদি সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়ার জন্য ভূতত্ত্ব ও ভূগােলবিদ্যার ব্যবহার জরুরি । এছাড়া ইদানীং কালে উপগ্রহ থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের যে ছবি প্রতিনিয়ত নেওয়া হচ্ছে , তা পাঠ করতে হলেও ভূবিজ্ঞানের জ্ঞান আবশ্যক। তবেই পরিবেশবিদ্যার বহুমাত্রিক চর্চা পরিবেশের সুস্থায়ী উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে ।