ইতিহাস শিক্ষণের লক্ষ্যসমূহ

✳️ লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ছাড়া কোনাে কাজ সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারে না । যেহেতু শিক্ষাক্ষেত্রে ইতিহাস একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় , সেহেতু ইতিহাসের শিক্ষণও কখনােই উদ্দেশ্যবিহীন হতে পারে না । ইতিহাস পাঠের লক্ষ্য নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই । তবে সাধারণত কোনাে বিষয় , ব্যক্তি বা ঘটনা সম্পর্কে প্রকৃত বা সঠিক তথ্য তুলে ধরাই ইতিহাস শিক্ষণের উদ্দেশ্য । কিন্তু এ ছাড়াও more তার আরও কতকগুলি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য রয়েছে । যেমন—

✨ সত্যানুসন্ধানে অনুপ্রেরণা লাভ : ইতিহাসের যথার্থ মূল্য নির্ধারণের জন্য শিশুকে অতীত সম্পর্কে পরিচিত করাতে হবে , ইতিহাস সম্পর্কে শিশুর স্বাভাবিক অনুসন্ধিৎসা জাগাতে হবে এবং যথাযথ উত্তরদান করে তার মানসিক আবেগ প্রশমিত করতে হবে । কোনাে বিষয় সম্পর্কে ভ্রান্তধারণার বশবর্তী হয়ে তার সম্পর্কে অপপ্রচার বা অতিরঞ্জিত প্রচারে ছাত্রছাত্রীরা যাতে বিভ্রান্ত না হয় , তাই যথাযথ ইতিহাস পাঠের মাধ্যমে তাদের সত্য অনুসন্ধানে অনুপ্রাণিত করে তােলা ইতিহাস শিক্ষণের অন্যতম লক্ষ্য ।

✨ দেশপ্রেম জাগরণ : অতীত গৌরবময় ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধাবােধ এবং জাতীয় বীর – নায়কদের জীবনী আলােচনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাতৃভূমির প্রতি শ্রদ্ধাবােধ জাগিয়ে তােলা তথা দেশপ্রেমের জাগরণ ঘটানাে ইতিহাস শিক্ষণের অপর লিত একটি লক্ষ্য ।

✨ জীবনযাপনের প্রস্তুতি : ইতিহাসের পাতায় পাতায় বিধৃত বিভিন্ন সভ্যতা ও সময়কালের মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতির ইতিহাস শিক্ষার্থীদের নাগরিক জীবনের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে । তাই ভবিষ্যতের পৃথিবীকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করে তােলার জন্য ইতিহাস শিক্ষণের অবশ্যই যথেষ্ট গুরুত্ব বিদ্যমান ।

✨ মানবতাবােধ সৃষ্টি : মানুষের সভ্যতা – সংস্কৃতি হল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ । এককথায় , ইতিহাস হল সমগ্র পৃথিবীর মানবজাতির ইতিহাস , তথা অমূল্য সম্পদ । ইতিহাসের যথার্থ অনুশীলনের মাধ্যমেই কেবল এই সম্পদের পরিপূর্ণ সংরক্ষণ সম্ভব । মানুষের মধ্যে মানবিক গুণাবলির বিকাশ ঘটিয়ে বিশ্ব মানবতাবােধে উদ্বুদ্ধ করে তােলাও ইতিহাস শিক্ষণের একটি প্রধান লক্ষ্য ।

✨ আন্তর্জাতিকতাবােধ জাগরণ : ইতিহাস শুধু কোনাে বিশেষ একটি জাতির নয় , এই হল সমগ্র মানবজাতির সম্পদ । অর্থাৎ আন্তর্জাতিকতাই ইতিহাসের মূল সত্য । নিজের দেশের ইতিহাস নিয়ে কোনাে জাতি গৌরব প্রকাশ করতে পারে , কিন্তু খণ্ডিত জাতীয়তাবােধ বা সংকীর্ণ জাত্যভিমানে সেই দেশ যেন ইতিহাসকে কলুষিত বা বিকৃত না করে । এটিও বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে যে , “ The aim of teaching history is to cultivate understanding of our heritage and of world heritage . ” সুতরাং ইতিহাস পাঠের যথার্থ উদ্দেশ্য হল প্রকৃত মানবতাবোেধ , বিশ্ব সৌভ্রাতৃত্ববােধ এবং আন্তর্জাতিক উদারতাবােধে উদ্বুদ্ধ হওয়া ।

✨ বিভিন্ন মানসিক শক্তি বিকাশে সহায়তা : শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মানসিক শক্তি , যেমন — স্মৃতিশক্তির অনুশীলন , কল্পনাশক্তির বিকাশ , বিচারবুদ্ধির উন্মেষ ( To train the faculties of memory , imagination and reasoning ) , অনুসন্ধিৎসা , যুক্তিশক্তির প্রয়ােগ , বিশ্লেষণী ক্ষমতা ইত্যাদির যথাযথ অনুশীলনের সুযােগ সৃষ্টি করাও ইতিহাস শিক্ষণের অন্যতম একটি লক্ষ্য । ইতিহাস পাঠের মূল কথাটি হল , জীবনের নৈতিক , সামাজিক , রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিচারবুদ্ধি প্রয়ােগের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ওঠা ।

✨ অগ্রগামী দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি : ইতিহাস শিক্ষণের অন্যতম একটি উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের আধুনিক ও উন্নতমনস্ক স্বচ্ছ ভাবার দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে সহায়তা করা । ইতিহাসে দেখা যায় , সবসময় সত্যেরই চরম প্রাপ্তি হয়ে থাকে । ইতিহাসে হতাশার কোনাে স্থান নেই । অতীত পর্যালােচনা করলে দেখা যায় , যুগ যুগ ধরে , মানুষ শত সহস্র প্রতিকূল পরিস্থিতি অতিক্রম করে , অসংখ্য বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে , ভবিষ্যতের উজ্জ্বল সম্ভাবনা অনুভব করে আজ ঠিক এক সুসভ্য মানবসমাজ গঠন করতে সমর্থ হয়েছে । মানব ইতিহাসের মূল সত্যই হল নির্ভয়ে দৃপ্তপদে এগিয়ে চলা । স্মরণীয় বেদের সেই অমােঘ বাণী চরৈবেতি চরৈবেতি ! অর্থাৎ এগিয়ে চলল । তাই শিক্ষার্থীদের সেই সত্যের পথে এগিয়ে চলার মন্ত্রে দীক্ষিত করাও ইতিহাস শিক্ষণের আর – এক লক্ষ্য ।

✨ জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির জাগরণ : জাতীয় গৌরবের কাহিনি অনুশীলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির জাগরণ ঘটানাে ইতিহাস শিক্ষণের একটি বিশেষ লক্ষ্য । এই লক্ষ্যে উপনীত হতে গেলে শিক্ষার্থীদের বৃহত্তর স্বার্থে নিজ নিজ ক্ষুদ্র স্বার্থ বিসর্জন দেওয়ার মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হতে হবে । জাতীয় সংহতির গুরুত্ব উপলব্ধিতে সচেতন হতে হবে । ইতিহাস শিক্ষণকে সেই লক্ষ্যে জাগ্রত থাকতে হবে । তাই প্রখ্যাত ভারতীয় ঐতিহাসিক V D Ghate লিখেছেন , সতী “” We can learn to lead efficient and useful lives only if we try to understand our present – day problems – national as well as international — accurately and dispassionately . History will show us how to do it .

Related posts:

বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীদের জীবন কথা
পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী : 2024
চন্দ্রযান-3 : চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণকারী প্রথম দেশ ভারত
GENERAL STUDIES : TEST-2
GENERAL STUDIES : 1
কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স: 8ই সেপ্টেম্বর
'জ্ঞানচক্ষু' গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
তপনের জীবনে তার ছোটো মাসির অবদান আলোচনা করো।
সমান্তরাল আলোকরশ্মিগুচ্ছ বলতে কী বোঝ ?
আলোকরশ্মিগুচ্ছ বলতে কী বোঝায় ? এটি কয়প্রকার ও কী কী ?
একটি সাদা কাগজকে কীভাবে তুমি অস্বচ্ছ অথবা ঈষৎ স্বচ্ছ মাধ্যমে পরিণত করবে ?
ঈষৎ স্বচ্ছ মাধ্যম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
অস্বচ্ছ মাধ্যম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
স্বচ্ছ মাধ্যম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
অপ্রভ বস্তুও কি আলোর উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে?
বিন্দু আলোক - উৎস কীভাবে পাওয়া যেতে পারে ?
বিন্দু আলোক - উৎস ও বিস্তৃত আলোক - উৎস কী ?
অপ্রভ বস্তু কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
স্বপ্নভ বস্তু কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
দিনেরবেলা আমরা ঘরের ভিতর সবকিছু দেখতে পাই , কিন্তু রাত্রিবেলা আলোর অনুপস্থিতিতে কোনো জিনিসই দেখতে পা...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page